চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা নারী শিশুরা
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| দুপুর ০২:১৩
বিশেষ প্রতিবেদন
ই-বার্তা ।। নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে নবজাতকসহ এক বছর থেকে ১৫ বছরের শিশুর সংখ্যাই বেশি। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর-সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে তারা আক্রান্ত। কেউ কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ঠিকমতো খেতে না পেয়ে তারা অপুষ্টিতে ভুগছে। মায়ের কাছ থেকে নবজাতক সন্তানও পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পুষ্টি। উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে অনেক গর্ভবতী খোলা আকাশের নিচেই প্রসব করছেন।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশু পড়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। তবে এসব নারী ও শিশুকে সহায়তা দেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য প্রায় দুই লাখ টিকার প্রয়োজন। এদিকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ কয়েকটি এনজিও সংস্থা এগিয়ে এসেছে। তবে তা খুবই সীমিত।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জানান, রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরির কাজও চলছে। নারী, শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভিজিএফের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রসূতিদের মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। মারা যেতে পারে শত শত মানুষ। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের কাজ হবে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা ও ত্রাণ বিতরণে সবার প্রতি আহ্বান জানানো। ত্রাণ ও চিকিৎসা উন্মুক্ত করে দেয়া। তিনি আরও বলেন, তার সংস্থা থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য বহু চিকিৎসকসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ এবং ওষুধের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান জানান, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার
থেকে সদ্য আসা কোনো শিশুকেই আগে টিকা দেয়া হয়নি। তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৩০টি চিকিৎসক টিম মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। গর্ভবতী, নবজাতক ও মায়েদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাজার হাজার রোহিঙ্গার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও ওষুধ প্রয়োজন। শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খুবই জরুরি। একই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানেটারি নিশ্চিত করাও দরকার। অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য সহায়তায় মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসায় সম্পৃক্ত জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি ওষুধসামগ্রীও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনিসহ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাড়তি চিকিৎসক সমন্বয় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সদ্য আসা রোহিঙ্গারা কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় ৫ হাজার শিশুকে টিকা দেয়া হয়েছে। এখনও যে সংখ্যায় শিশু রয়েছে, তাতে প্রায় দুই লাখেরও বেশি টিকার প্রয়োজন। টিকাও পর্যাপ্ত রয়েছে।
কক্সবাজার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ডা. নাসিমা ইয়াসমিন ফোনে জানান, ৭ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যমজ দুই শিশুসহ ১৭ জন শিশুর জন্ম করিয়েছেন তারা। কেউ রাস্তায় আবার কেউ বারান্দায় সন্তান প্রসব করছেন। যেসব ঝুপড়ি ও বারান্দায় সন্তান প্রসব হয়েছে সেসব স্থানে লাল ও হলুদ পতাকা টাঙানো হয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মহিলারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন না বললেই চলে। প্রতিটি পরিবারে ৪-৫ জন করে শিশু রয়েছে। কারও কারও ১০-১২ জন সন্তানও আছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত দুই শতাধিক নারী সন্তান প্রসব করেছেন। এখনও সন্তানসম্ভবা শত শত নারী রয়েছেন। এসব নারী চরম স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছেন, রয়েছেন ঝুঁকিতে।
এদিকে মঙ্গলবার ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা প্রধান জু্যঁ লিবে জানান, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখেরও বেশি শিশু চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাথমিক উপাত্ত অনুযায়ী শরণার্থীদের ৬০ শতাংশ হল শিশু।