নীল চশমা- ডাঃ ফারহানা মোবিন
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার
| দুপুর ০২:০৫
গদ্য
হঠাৎ বেজে উঠল মোবাইল ফোন। আমিনুল সাহেব ভীষণ বিরক্ত হয়ে দেখলেন তার মা মিস কল দিয়েছেন। বিরক্ত হয়ে বৃদ্ধা মাকে বকা দিলেন সব কলিগদের সামনে। চিৎকার করে বললেন, তুমি ব্রিটিশ আমলের মানুষ, তুমি যখন তখন ফোন করে ফেলো, জানোই না যে মিটিং এর সময় ফোন করতে হয়না। ছেলের চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে গেলেন বৃদ্ধা মা।
মা- বাবা, আমিতো জানিনারে কখন তোর মিটিং থাকে। তাই ভুল করে ফোন করে ফেলেছি।
ছেলের বকা খেয়ে দুচোখ ভিজে উঠল বৃদ্ধা মায়ের। ছানি পড়া চোখটি আরো ঝাপসা হয়ে উঠল।
দরজাতে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। দরজা খুলতেই উপমা প্রশ্ন করল
- দীদা, তুমি দরজা বন্ধ করে কেন ফোন করো? তোমার এত গোপন কি কথা থাকে?
দীদা- নারে দাদু ভাই, তোর বাবার সাথে আমার কোন গোপন করা নাই। কারো সাথে আমার কোন গোপন কথা থাকেনা।
- তাহলে এইভাবে চুরি করে ফোন করো কেন? প্রশ্ন করল উপমা।
দীদা- তোর বাবাকে ফোন করতে দেখলে, তোর মা খুব বিরক্ত হবে।
উপমা- আমার বাবা তোমার ছেলে, তুমি তাকে ফোন করতেই পারো।
দীদা- ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেলে সবাই বাবা মার আপন থাকে না।
উপমা- তাহলে বড় হয়ে কি আমিও বাবা মায়ের পর হয়ে যাবো?
দীদা- না দাদু ভাই, তুই খুব ভালো মেয়ে। ভালো মেয়েরা সবার আপন থাকে। তোর বাবা আমাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছে, তুই কখনো তোর বাবা মাকে কষ্ট দিবিনা।
উপমা- তুমি কাঁদছো কেন?
দীদা- কই কাঁদছিনাতো।
দীদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল উপমা। দীদা হাত বুলাতে লাগলেন উপমার মাথায়। মনোযোগ দিয়ে উপমা শুনতে লাগলো পুরানো দিনের গল্প।
হঠাৎ ঘরের বাহিরে প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেচি। উপমা লাফ দিয়ে উঠল বিছানা থেকে। এক চোখ দিয়ে মালতি বেগম দেখলেন তার ছেলের বউ চিৎকার করে বছলেন- কেন মা তোমাকে জমির ঐ ভাগ দিবে? মা আমার বাসায় থাকে, তার একটা খরচ আছেনা, ঐ জমির ভাগ আমাদের। মা ঐ জমি কাউকে দিতে পারবেনা। আমি কাউকে দিতে দিবোনা। জমির ভাগ আমাকে দিয়ে তারপরে এই বাসা থেকে জাহান্নামে যাক। তাতে আমার কোন আপত্তি নাই।
ছেলের বউ এর কথা শুনে মালতি বেগমের বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব হলো। তিনি বসে থাকতে পারলেন না। বিছানায় শুয়ে পড়লেন।
উপমা- দীদা আমি সোনারগাঁ হোটেলে চলে যাচ্ছি। সাঁতার কাটতে, এইসব টাকা পয়সার ঝগড়া আমার ভালো লাগছেনা। আর শোনো তোমার মোবাইলে ৫০০ টাকা দিয়েছি। তুমি যার সাথে ইচ্ছা মন খুলে কথা বলো। তুমি ৫০ টাকার জন্য বাবা আর ফুফুদের কাছে হাত পাতো আমার খুব খারাপ লাগে। তুমি আমার কাছে থেকে নিবা।
দীদা- তুই টাকা পাবি কোথায়?
উপমা- আমি প্রতি মাসে ১০০০ টাকা স্কলারশীপ পাই। এই ১০০০ থেকে ৫০০ টাকা তোমার, ৫০০ আমার।
আবেগ আর আনন্দে মালতি বেগম বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন তাঁর নাতনীকে।
দীদা- তুই ছাড়া আমার কেউ নাইরে। তুই আমার খুব ভালো বন্ধু।
চলবে...
আগের খবর কাগজের ঠোস- ডাঃ ফারহানা মোবিন
পরবর্তী খবর বাসন্তী রাঙা বাড়ী ও মাধবীলতা