ছোট্ট সোনামণির অসুস্থতায় করণীয়- পর্ব ৫
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৯শে অক্টোবর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| দুপুর ০১:৩১
মেডিকেল
ই-বার্তা হেলথ।। কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন(Constipation) সম্পর্কে আমরা কমবেশি জানি। কিন্তু শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, প্রতিকারই বা কী-সে সম্পর্কে ধারণা হয়তো আমাদের অনেকেরই নেই। অনেক শিশু আছে, দু-তিন দিন পায়খানা না করেও ভালো থাকে। আবার অনেকের এক দিন পায়খানা না করার কারণেই পেট ফুলে যেতে পারে। ব্যথায় শিশুটি চিৎকারও করতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য(Constipation) কী-
মলত্যাগ করতে কারও যদি অসুবিধা হয় অথবা বেশি সময় লাগে, তাকেই আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য বলে থাকি। অনেক সময় অসুস্থতার কারণে কম খাওয়ার ও অপর্যাপ্ত পানি পান করায় কিছুদিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পরে সুস্থ হলে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সব সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এর কারণ বের করে চিকিৎসা করাতে হবে।
বেশি দিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ক্রনিক কনস্টিপেশনের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন-
১। খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণ- কম আঁশযুক্ত খাবার খেলে অনেক শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। গরুর দুধ খেলেও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
২।শারীরিক ত্রুটি- অ্যানোরেকটাল স্টেনোসিস বা মলদ্বার জ্নগতভাবে বন্ধ থাকলে।
৩। স্মায়ুতন্ত্রের ত্রুটি- যেমন অ্যাগ্যাং লিওনোসিস করা, স্মায়ু ও মাংসপেশির ত্রুটি থাকলে।
৪। মানসিক প্রতিবন্ধী হলে
৫। স্মায়ুর সমস্যা বা সেরেব্রাল পলসি থাকলে।
৬। জন্মগতভাবে পেটের সামনের মাংস না থাকলে।
৭। শরীরের শক্তি কমে যাওয়া বা হাইপোটনিয়া হলে।
৮। হাইপোথাইরয়েডিজম হলে
৯। বহুমূত্র রোগ হলে
১০। শরীরে ক্যালসিয়াম বেশি হলে
তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে বেশি। এ ধরনের শিশুর কয়েক মাস ধরে পায়খানার সমস্যা থাকে এবং বেশ কয়েক দিন পর পর পায়খানা হয়। অনেক সময় শিশুটি হয়তো প্যান্ট নষ্ট করবে, মাঝেমধ্যেই সে স্কুলে অনুপস্থিত থাকবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী হয়-
১। পেটে ব্যথা মাঝেমধ্যে থাকবে, আবার কিছু সময় থাকবে না
২। খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা, ক্ষুধামান্দ্য ভাব দেখা দেবে
৩। বমি হতে পারে বা বমি ভাব থাকতে পারে
৪। শরীরের ওজন বাড়বে না
৫। পরীক্ষা করলে দেখা যাবে পেটটা শক্ত ও ফুলে আছে। পেটের ওপর হাত দিলে শক্ত মলগুলো অনুভূত হবে। মলদ্বার আর্দ্র থাকবে এবং স্পিংটার খোলা থাকবে। এর ওপরই মলগুলো আটকে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা-
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে শিশুদের জন্মকালীন কিছু তথ্য নিতে হবে। যেমন-
- জন্মের পর পায়খানা বা মলত্যাগ করতে বিলম্বিত হয়েছে
কি না, ছোটবেলায় মলত্যাগের অভ্যাস কেমন ছিল, খাওয়ার অভ্যাস কেমন ছিল, মা-বাবা ও সন্তানের মলত্যাগের অভ্যাস, মলদ্বারে ফিসার আছে কি না, স্টেনোসিস বা মলদ্বার বন্ধ কি না এবং মলদ্বারে স্পিংটারের টোন বা স্মায়ুর কার্যকারিতা ঠিক আছে কি না।
- যদি স্পিংটার টাইট বা শক্ত হয়, মলদ্বার মলশূন্য থাকে, পেট ফোলা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির হারসপ্রুং রোগ হয়েছে। যদি স্পিংটার ঢিলা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে স্মায়ুতন্ত্রের দুর্বলতার কারণে হয়েছে।
- কোমরে মেরুদণ্ডের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত রোম এবং খাদের মতো থাকলে তা জন্মগত ত্রুটি, যাকে বলে স্পাইনা বাইফিডা অকাল্টা।
- শিশুকে সুস্থ ও শান্তভাবে মলত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশু যেন ব্যথা না পায় এবং মা-বাবা যেন চিন্তামুক্ত থাকেন, অস্থিরতায় না ভোগেন-সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। প্রয়োজনে বাচ্চাদের সময়মতো মলত্যাগের জন্য পুরস্কৃত করে উৎসাহিত করতে হবে।
- শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে এবং আঁশযুক্ত খাবার দিতে হবে। শক্ত পায়খানা নরম করার জন্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
- যদি এসবে পায়খানা না হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে সিম্পল এনেমা দিতে হবে। বাসায় গ্লিসারিন সাপোজিটরি দেওয়া যেতে পারে। এক থেকে দুই চামচ মিথাইল সেলুলোজ খাওয়ার পর দেওয়া যেতে পারে।
মলদ্বারে ফিসার থাকলে চিকিৎসা করাতে হবে। মানসিক কোনো সমস্যা থাকলে শিশু-মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- এসব চিকিৎসায় ব্যর্থ হলে ধরে নিতে হবে শিশুর হারসপ্রুং রোগ হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় মলদ্বার থেকে বায়োপসি করলে প্যারা সিম্পেথেটিক গ্যাংলিওনিক সেল নেই। এ রোগ সাধারণত জ্নের প্রথম মাসে ৮০ শতাংশ এবং প্রথম বছরে ৯৫ শতাংশ ধরা পড়ে। এ রোগে পেট ফোলা, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, খাবারে অনীহা, হলুদ বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
- এক্স-রে করলে পেটে গ্যাস ও মল দেখা যাবে, রেকটাল অ্যাম্পুলায় গ্যাস থাকা মানেই হারসপ্রুং রোগ। অপারেশন করে এর চিকিৎসা করাতে হবে। তাই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অবহেলা না করে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আপনার সন্তানকে সুস্থ রাখুন।
পরবর্তী খবর লো ব্লাড প্রেশারে করনীয়