ছোট্ট সোনামণির অসুস্থতায় করণীয়- পর্ব ৬


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৩শে অক্টোবর ২০১৭, সোমবার  | বিকাল ০৫:০৮ মেডিকেল

=নবজাতক শিশুর বমি=

ই-বার্তা।। বাড়ির ছোট্ট সোনামনির কোনো কারণে বমি হলে বাবা-মা অথবা নিকট-আত্মীয়ের চিন্তিত হওয়ারই কথা। অনেক কারণেই শিশুর বমি হতে পারে। এর পেছনে বেশির ভাগ সময়ই খুব সাধারণ কারণ থাকে তাই পরিবার অতটা গুরুত্বের সাথে ব্যপারটা দেখে না। তবে একেবারেই নির্ভাবনায় থাকা যাবে না। কারণ এর পেছনে অনেক জটিল কারণ বা রোগও থাকতে পারে।

নবজাতকের বমির সাধারণ কারণ-
১। জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যে শিশু পরিমাণে কম, পানির মতো ফেনা ফেনা বমি করে। এর কারণ, নবজাতকের পেটে মায়ের পেটে থাকাকালীন সময়ের পানি থাকে। আর তা অনেক সময় জন্মের পরপর বমি করে বের করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই একবার বমি করার পর আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। বারবার বমি করলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

২। মায়ের দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে কাঁধে নিয়ে ঢেঁকুর তোলার সময় সুস্থ শিশুও কিছুটা দুধ বমি করে ফেলে, যা গাল বেয়ে পড়ে যায়। এটি আসলে বমি নয়। মুরব্বিরা একে বলে থাকেন ‘দুধ তোলা’। এর কারণ শিশু মায়ের বুকের দুধ টানার সময় বাতাসও খেয়ে ফেলে, এই বাতাস পেট থেকে বের করার সময় কিছুটা দুধ তুলে ফেলে। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। এ জন্য দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

৩। অনেক সময় নবজাতক কোনো কারণে অতিরিক্ত কান্না করলে বমি করে ফেলে। সে ক্ষেত্রে শিশুকে শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে এবং তার কান্নার কারণ খুঁজতে হবে। এ ছাড়া পেটে গ্যাস জমে পেটব্যথা হলেও শিশু কান্না করে। এ সময় শিশুকে খাড়া কোলে রাখলে সামান্য বমি করে ফেলে, ফলে পেট থেকে বাতাস মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যায় এবং কিছুটা শান্ত থাকে।

৪। অনেক সময় দেখা যায়, মায়ের দুধ খাওয়ানোর পর বাড়ির অন্য লোকজন শিশুকে আদর করছে। তবে বেশি আদর করতে গিয়ে কেউ কেউ শিশুকে ঝাঁকাঝাঁকি শুরু করে, ফলে শিশু বমি করে দেয়। এ জন্য শিশুর বুকের দুধ খাওয়া শেষ হলে তাকে খাড়া কোলে রেখে পেটের বাতাস বের করে দিতে হবে এবং আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে।

৫। জন্মের পর থেকে শিশুর পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত (১৮০ দিন) বুকের দুধই যথেষ্ট। অনেক মা-বাবা বুকের দুধ খাওয়ানোর পরও ভাবেন হয়তো তার সন্তান পরিমাণমতো দুধ পায়নি। তখন একটা কৌটার দুধ খাওয়ানো শুরু করলে প্রায় সময় দেখা যায়, বুকের দুধের ওপর কৌটা বা অন্য যে কোনো দুধ দেওয়ার পর শিশু বারবার বমি করছে। সঠিক সিদ্ধান্ত হলো, আপনার নবজাতককে শুধু বুকের দুধ খাওয়াবেন। মনে রাখবেন, আপনার শিশু যদি ২৪ ঘণ্টায় ছয় বা তার অধিক পরিমাণে প্রস্রাব করে, তবে বুঝতে হবে শিশুর জন্য বুকের দুধই যথেষ্ট।


এ তো গেলো নবজাতকের বমি করার সাধারন কারণ। এবার চলুন জেনে নেই বমির খারাপ কারন গুলো-
১। যদি নবজাতক মায়ের দুধ না টানতে চায় বা অল্প টেনে বারবার বমি করে, বমি লাল (রক্ত মেশানো) বা হলুদ (পিত্তরস মেশানো) বর্ণের হয়, সেই সঙ্গে শিশু যদি নেতিয়ে পড়ে, জ্বর দেখা দেয় বা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৯৮.৪০ ডিগ্রী) কম হয় কিংবা পেট ফেঁপে ওঠে, তবে বুঝতে হবে আপনার নবজাতকটি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২। কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মস্তিষ্কের চাপ বেড়ে গেলে; জন্মের পর শিশু না কাঁদলে; নবজাতকের ইনফেকশন বা নিওনেটাল সেপসিস কিংবা মস্তিষ্কে ইনফেকশন হলে, হার্ট ফেইলিওর অথবা মেটাবলিক ডিসঅর্ডার যেমন গেলাকনোসেমিয়া ইত্যাদি হলেও নবজাতকের বমি হতে পারে।

৩। সংখ্যায় খুব অল্প হলেও নবজাতকের পেটের অন্ত্রে কোনো জন্মগত ত্রুটির কারণে অন্ত্রের পথ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে শিশু দু-তিন সপ্তাহ বয়সে খাওয়ার পরপরই বমি করে দেয়। বমি ছিটকে গিয়ে বেশ দূরে পড়ে এবং বমি করার পরপরই আবার দুধ খেতে চায় এবং খাবার কিছুক্ষণ পর আবারো একইভাবে বমি করে দেয় এবং শিশুর ওজন কমতে থাকে। এ ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে আল্টাসনোগ্রাম করেই এই রোগ নির্নয় করা যায়।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ