জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে প্রশ্নত্তোর


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩রা নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার  | বিকাল ০৩:০০ মেডিকেল

ই-বার্তা।। জন্মনিয়ন্ত্রণ আমাদের দেশে এখনো খুব লজ্জার আর গোপন বিষয়। অথচ একটি দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন থেকে শুরু করে একটি সুস্থ স্বাভাবিক পরিবার পরিকল্পনার জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ খুবই প্রয়োজনীয় ও সাধারণ একটি ব্যপার। প্রতিটি দম্পতির উচিত বিয়ের সময়ই নিজেদের পরিবার পরিকল্পনা করে ফেলা ও প্রয়োজনমতো জন্ম নিয়ন্ত্রন করা। সঠিক সচেতনতা ও প্রচারের অভাবে অনেক ছেলে-মেয়েই জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন না। তাই এই প্রসঙ্গে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলো ই-বার্তার পাঠকদের উদ্দেশ্যে।

প্রশ্নঃ জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খেলে কি সন্তানসম্ভাবনা হ্রাস পায় ও ক্যানসার হবার সম্ভাবনা বাড়ে?
উত্তরঃ জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খেলে সন্তানসম্ভাবনা হ্রাস পায়, একথা ভূল। পিল বন্ধ করার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার গর্ভসঞ্চার হয়।
জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খাওয়ার সঙ্গে ক্যানসারের প্রত্যক্ষ কোনও সম্বন্ধ নেই| এখন পর্যন্ত গর্ভনিরোধক পিলের হরমোন মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণীর ক্যানসার সৃষ্টি করে এমন প্রমাণ মেলেনি।

প্রশ্নঃ ডায়াবেটিস থাকলে জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খাওয়া যায়?
উত্তরঃ ডায়াবেটিসের রোগীর জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খাওয়া উচিত নয়। সাধারণভাবে ডায়াবেটিস যদি মহিলার থাকে তাহলে পিল বাদে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে। পুরুষের ডায়াবেটিস তা স্ত্রীর পিল খাওয়ার উপড়ে কোন খারাপ প্রভাব ফেলে না।

প্রশ্নঃ জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খেলে কি পিরিয়ডের গণ্ডগোল হতে পারে?
উত্তরঃ পিল খেতে ভুল হয়ে গেলে ঋতুচক্রের মাঝখানে আবার ব্লিডিং শুরু হয়ে যেতে পারে। সেরকম হলে পিলের ডোজ বাড়িয়ে যেদিন ভুল হয়ে গেছে তার পরের দিন একসঙ্গে দু’টি বড়ি খেয়ে নিতে হবে। আর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশ্নঃ কপার-টি কি? এটি কি ধরণের শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি করে?
উত্তরঃ কপার-টি হোলো মেয়েদের জরায়ুর ভেতরে ব্যবহারের জন্য একটি জিনিস যা অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ করে। কপার-টি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এটি ব্যবহারের ফলে যৌন সঙ্গমে কোনো বাধা হয়না। যেকোনো সময় খুলে ফেলা যায়। এটি খুলে ফেলার পর গর্ভধারনের ক্ষমতা ফিরে আসে এছাড়া কম খরচে বহুদিন জন্মনিরোধ করা যায়। খুব কম ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে ব্লিডিং হতে পারে, সেক্ষেত্রে ডাক্তার দেখিয়ে নিলেই সমাধান হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ লাইগেশন কি? এটি করানোর পর মেয়েরা কি ধরণের সমস্যায় পরতে পারে?
উত্তরঃ লাইগেশন পদ্ধতিতে মহিলাদের ডিম্বানুর গমন পথকে কেটে পৃথক করে দেয়া হয়। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু যে টিউবের মাধ্যমে জরায়ুতে আসে, লাইগেশন অপারেশন দ্বারা এই টিউব কে বেধে এবং কেটে দিয়ে এই পথ কে বাধাগ্রস্ত করা হয়। এটি একটি স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
কোনো দম্পতির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা যাচাই করে, তাঁদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তবেই এই অপারেশন করা হয়। তবে যেহেতু এই অপারেশানের পর কেউ আর মা হতে পারেনা, ফলে হঠাৎ সন্তান


নেয়ার ইচ্ছা হলে কিছুটা মানসিক অশান্তি হতে পারে।

প্রশ্নঃ পুরুষের স্থায়ী গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা কি?
উত্তরঃ পুরুষের স্থায়ী গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা হোলো নির্বীজন বা ভাসেকটমি। শুক্রনালি কেটে দিয়ে শুক্রাণুর বহির্গমনের পথ বন্ধ করাকে ভাসেকটমি অপারেশন বলে। এই অপারেশনে কাজের ক্ষমতা বা দৈহিক ক্ষমতা এতটুকুও হ্রাস পায় না। এই অপারেশান লোকাল অ্যানাসথেসিয়াতেই করা যায়্। এটি করে রোগী কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়। এক সপ্তাহ অল্প ব্যথা হয়েই এরপর একদম স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারেন রোগি। আর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনও এক সপ্তাহ পরেই সম্ভব, কেবলমাত্র প্রথম তিনমাস কনডম ব্যবহার করতে বলা হয়, তারপর সিমেন পরীক্ষায় যখন আর একটি স্পার্মাটোজোয়া বা শুক্রাণু থাকবে না, তখন থেকে একেবারে নিশ্চিন্ত।

প্রশ্নঃ একটি দম্পতির কোন স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি নেয়া উচিত? লাইগেশন না ভাসেকটমি?
কোনো দম্পতি স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি নিতে চাইলে অবশ্যই ভাসেকটমি নেয়া উচিত। কারণ এতে জটিলতার আশঙ্কা মেয়ের লাইগেশন অপেক্ষা অনেক কম। খরচও অনেক কম আর রোগী অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ অনাকাঙ্খিত প্রথম বাচ্চা কি নষ্ট করা উচিত?
উত্তরঃ সাধারণভাবে প্রথম বাচ্চা নষ্ট না করার পরামর্শ সব ডাক্তার দিয়ে থাকেন। প্রথম গর্ভাবস্থায় ইউটেরাস বা জরায়ুর মুখ এত নরম ও সরু থাকে যে, যন্ত্রপাতি দিয়ে তা প্রসারিত করার সময় জরায়ু মুখ বা জরায়ুর পেশি ছিঁড়ে গিয়ে জরায়ুর মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি এই ক্ষতির ফলে ভবিষ্যতে সন্তান নাও হতে পারে।
তবে অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে সবদিক বিবেচনা করে গর্ভপাত করতেই হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত শিক্ষিত ডাক্তারের কাছে এবং ভালো মানের হাসপাতালে গর্ভপাত করাতে হবে, যদিও তাতেও পরবর্তী গর্ভধারণে ঝুঁকি থেকেই যায়। নাহলে, ফুল বা ভ্রূণের অংশ জরায়ুর মধ্যে থেকে যেতে পারে, জরায়ুর মুখ ছিঁড়ে যেতে পারে, জীবাণুর আক্রমণ বা সেপটিক হয়ে পেরিটোনাইটিস হতে পারে, আভ্যন্তরীণ রক্তস্রাবের কারণে মায়ের কোলাপস ও শক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আমাদের দেশে সব থেবে বেশি যা দরকার তা হোলো সচেতনতা। বিদেশে যেখানে ভাসেকটমির সংখ্যা লাইগেশানের থেকে বেশি, সেখানে আমাদের দেশে বলির পাঁঠা সবসময় হয় মেয়েরা। মেয়েদের লাইগেশানের হার পুরুষদের ভাসেকটমির থেকে এতগুণ বেশি যে কোনও তুলনাতেই আসে না। আমাদের সমাজ এখনও পুরুষশাসিত। এখানে নারীর ইচ্ছার চেয়ে পুরুষের ইচ্ছার দাম অনেক বেশি। আর আছে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা। এসমস্ত ভ্রান্ত ধারণা কাটিয়ে উঠলে ও সমাজে সচেতনতা বাড়লে হয়তো একদিন আমাদের দেশের গর্ভবতী নারী মৃত্যুর হাড়, গর্ভপাতের হার, গর্ভধারনে জটিলতার হার সব কমে আসবে।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ