ট্যানারির বর্জ্যপানি থেকে বছরে কয়েক লাখ মেট্রিকটন সার উৎপাদন সম্ভব


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২১শে মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার  | রাত ০৯:৩৩ বিশেষ প্রতিবেদন

বিশেষ প্রতিবেদক,ই-বার্তা : ট্যানারি শিল্প, কল-কারখানা, বাসাবাড়ি, স্যুয়ারেজ লাইন কিংবা মানব বর্জ্য মিশ্রিত পানি বহন করে বিষাক্ত কার্বণ অয়ামোনিয়া, ক্রোমিয়াম, নাইট্রোজেন, নিকেল, পারদ, শীসা ও ফসফরাসসহ প্রায় ২০/২৫ ধরনের ভয়ঙ্কর রাসায়নিক। এগুলোর ভারি ধাতব মিশে স্বচ্ছ পানিকেও পরিণত করে বিষে। যা দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মানব শরীরে ছড়াতে পারে ক্যান্সারের মত ভয়ংকর ব্যাধি।




বুয়েটের এক হিসেব বলছে, প্রতিদিন সারা বিশ্বে প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন বা ৯৫ লাখ ভারি বর্জ্যমিশ্রিত পানি পুকুর, নদী, খাল এবং সাগরে গিয়ে ভূপৃষ্ঠের পানিতে মিশে বিশ্বের প্রায় ২শ’ কোটি মানুষের জীবনকে সরাসরি হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে বর্জ্য মিশ্রিত এই পানির ভয়ংকর এসব পদার্থকে পরিশোধনের মাধ্যমে বসে এনে রুপ দেওয়া যেতে পারে কৃষিতে ব্যবহার্য উন্নতমানের সার হিসেবে। বিশ্ব পানি দিবস নিয়ে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উঠে আসে এসব কথা।




অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ বর্জ্যমিশ্রিত পানি কোন রকম পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি মিশে দেওয়া হচ্ছে পরিবেশে। বাংলাদেশে এর হার আরও বেশি; প্রায় ৯২ শতাংশ। এতে নদ-নদী ও খাল দূষণের পাশাপাশি দূষিত এই পানি ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর দীর্ঘ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ। দেশে এখন বর্জ্য পানি পরিশোধন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই পানিকে পরিশোধন করে একদিকে যেমন শিল্প কারখানায় পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব, তেমনি ভারি ধাতবকে জমি উর্বরা সারে পরিণত করে মাটি ক্ষতিকারক রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব।




অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা ওয়াসার এমডি তাসকিম এ খান জানান, সরকার ইতোমধ্যে ঢাকার বর্জ্য পানি পরিশোধনে পাঁচটি পরিশোধন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পণা হাতে নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এগুলো চালু হলে বর্জ্য পানির সমস্যা কমানো সম্ভব হবে।


তবে অন্যান্য বক্তারা তাসকিম এ খানের সাথে দ্বি-মত পোষণ করে বলেন, সরকার যত উদ্যোগই নিক না কেন ঢাকার পানি থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত বর্জ্য কমানো সম্ভব নয় যতক্ষণ না স্টর্ম ওয়াটারের (বৃষ্টির পানি) লাইনের সাথে সারফেস ওয়াটার (উপরের পানি) লাইন আলাদা করা না হবে।পাশাপাশি বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ মানুষ এখনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম বা পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার বাইরে উল্লেখ করে বক্তারা অভিযোগ করেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে সরকার ট্যানারি শিল্পের কারখানাগুলোকে সাভারে সরানোর উদ্যোগ নিলেও সেখানে ট্যানারির বর্জ্যে ধলেশ্বরী নদী দূষিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন সরকার দেশের পানিসম্পদ সুরক্ষায় নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ অন্যতম। ব্যারাজটি নির্মাণ হলে গঙ্গা অববাহিকায় শুস্ক মৌসুমে পানি পাওয়া সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি হবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মিঃ মাহমুদ বলেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও শেখ হাসিনা বেশ আন্তরিক। ফলে এটি দ্রুত সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।




টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি ৬-এ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে শতভাগ স্যানিটেশন, স্যুয়ারেজ এবং জনগণের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এর বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে শতভাগ সুষম পানি ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই।
e-barta/b

সর্বশেষ সংবাদ

বিশেষ প্রতিবেদন এর আরও সংবাদ