ত্বকের যত্ন
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৬শে নভেম্বর ২০১৭, রবিবার
| বিকাল ০৫:০৬
মেডিকেল
ই-বার্তা ।। আমাদের শরীরের বাইরের আবরণের নাম ত্বক। পুরো শরীরে ত্বকের বিস্তৃতি। ত্বককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অঙ্গ বলে। কারণ ত্বকে রয়েছে অসংখ্য গ্রন্থি। যেমন তেলগ্রন্থি, ঘামগ্রন্থি ইত্যাদি। স্থান-কাল-পাত্রভেদে একেক ব্যক্তির ত্বক একেক রকম বর্ণ ও মসৃণতাবিশিষ্ট হয়। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায়ই একটি শিশুর পুরো দেহে ত্বক তৈরি হয়ে যায়। পুরুষের তুলনায় নারীর ত্বক অপেক্ষাকৃত মসৃণ হয়। কারণ নারীদেহে লিপিড (চর্বি), গ্লিসারলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। ত্বকের পুরো অংশেই রয়েছে মৌমাছির চাকের মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্র। এসব ছিদ্র দিয়ে ঘাম, দেহের বর্জ্য, বায়ু দেহের বাইরে বের হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি এসব ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। এতে সৃষ্টি হয় ব্রণ। মৌমাছির চাকের মতো ছিদ্রগুলো থাকার জন্য ত্বককে দেহের মৌচাকের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে এই ছিদ্রগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না।
ত্বকের দুটো অংশ রয়েছে। এপিডার্মিস ও ডার্মিস। ত্বকের বাইরের পাতলা আবরণটির (যা খালি চোখে দেখা যায়) নাম এপিডার্মিস। এখানে ত্বকের ঘাম, তেলগ্রন্থির ছিদ্রপথ দেখা যায়। এই পথ দিয়ে ঘাম বা তেল বের হয়। রোম বা চুলের ওপরের অংশ এপিডার্মিস দিয়ে বের হয়। ধমনি বা শিরা এখানে থাকে না। আর ডার্মিস হচ্ছে ত্বকের ভেতরের অংশ। এখানে শিরা, ধমনি, স্নায়ু, ঘামগ্রন্থি, তেলগ্রন্থি থাকে। ত্বকের এই অংশ আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না।
ত্বকের কাজ-
১। ত্বক ঘাম নিঃসরণ করে দেহের রোগজীবাণু বাইরে বের করে দেয়।
২। দেহের নরম অঙ্গগুলো বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।
৩। তেলগ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণ করে। এই তেল ত্বকের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসে, যা ত্বকের মসৃণতা বাড়ায়।
পরিচর্যা
৪। শীতকালের বাতাসে ধুলা ওড়ে বেশি। তাই যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন থাকুন। শীতের রোদে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে, যা ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শীতের রোদে বেশিক্ষণ থাকবেন না।
৫। মাসে অন্তত দুদিন বালতিতে দুই বা তিন ফোঁটা স্যাভলন বা ডেটল (অথবা ডেটল সাবান) দিয়ে গোসল করুন। এতে ত্বকে জমে থাকা অণুজীব, রোগজীবাণু মারা যাবে। আর দেহ থেকে ঘাম হয়ে বের হওয়া বর্জ্য, বায়ু, তেল ও রোগজীবাণু ধ্বংস হবে।
৬। প্রতিদিন গোসল করুন (শিশু ও প্রৌঢ়দের পরিবেশ ও শরীরের অবস্থা বুঝে নিতে হবে)। এতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে।
৭। রোম ওঠানোর জন্য ভালো মানের প্রসাধনী ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে প্রসাধনীর তারিখ (পণ্য উৎপাদন ও মেয়াদ শেষ হওয়ার) অবশ্যই খেয়াল রাখুন। রোম বা ভ্রƒ গজানোর ধরন বুঝে তুলুন। অতিরিক্ত নিয়মিত রোম বা ভ্রƒ তুললে চল্লিশের পর মেয়েদের ত্বক ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দেহের ধরন বুঝে চলা দরকার।
৮। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং তা বজায় রাখুন। তৈলাক্ত খাবার যতটুকু সম্ভব কম খাবেন। প্রতিদিন একটা ফল খান। যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাবেন। দেহের প্রতিটি রোমের গোড়ায় কূপ রয়েছে। যত বেশি পানি খাবেন দেহের রোমকূপগুলো তত বেশি কর্মক্ষম হবে।
৯। দুশ্চিন্তা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে। সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। হজমের সমস্যা না থাকলে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খান।
১০। শরীরের ওজন বাড়ার সমস্যা না থাকলে শীতকালের সকালে প্রতিদিন এক চা-চামচ মধু খেতে পারেন। মধুতে অ্যান্টিবায়োটিক থাকে, যা রোগজীবাণু ধ্বংস করে, চেহারায় লাবণ্য বাড়ায়, ত্বকে মসৃণতা বাড়ায়।
১১। মুখে যেনতেন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুখে যেকোনো সাবান লাগাবেন না।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)
আগের খবর রক্তনালি- দেহের পাইপলাইন
পরবর্তী খবর ফুসফুস- শরীরের বেলুন