নাটোরের কাঁচাগোল্লা
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৭ই মে ২০১৭, রবিবার
| রাত ০৮:৩৫
দেশ
তারিকুল হাসান
বিল চলন, গ্রাম কলম, কাঁচাগোল্লার খ্যাতি
অর্ধ- ভুবনেশ্বরী রানি ভবানীর স্মৃতি
উত্তারা গণভবন রাজ- রাজন্যের ধাম
কাব্য ইতিহাসে আছে নাটোরের কাচাগোল্লার নাম।
নাটোর শহরের লালবাজার এলাকায় মধুসুধন দাসের ছিল একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টান্নর দোকান। বেশ কয়েকটি বড় বড় চুলাও ছিল দোকানের পিছনের দিক টায়। এসব চুলায় মধুসুধন দাস প্রতিদিন দেড় থেকে দুই মণ ছানা দিয়ে রসগোল্লা, পানতোয়া, চমচম সহ আরও অনেক ধরনের মিষ্টি তৈরি করতেন। দোকানে কাজ করত ১৫- ২০ জন কারিগর। হঠাৎ একদিন দোকানে কারিগর না আসায় পড়তে হয় বিপাকে। এত ছানা দিয়ে এক হাতে কত মিষ্টি-ই বা বানাবেন তিনি, তখন অদ্ভুত এক বুদ্ধি আসে তার মাথায়। কাঁচা ছানা গুলোকে চিনির রসে ঢেলে জ্বাল দেন মদুসুদন। জমাট আকার পেলে মুখে দিয়ে এর স্বাদে চমকে ওঠেন তিনি। নতুন মিষ্টির নাম কি হবে তা নিয়ে শুরু হল চিন্তা ভাবনা। যেহেতু চিনির রসে ডোবানর আগে কিছুই করতে হয়নি এবং এতে কোন রস নেই তাই এ মিষ্টির নাম দেন কাঁচাগোল্লা।
প্রকৃতির লীলাভূমি চলনবিল, বাংলার মহীয়সী শাসনকর্ত্রী মহারানী ভবানী, উত্তর বঙ্গের রাষ্ট্রীয় ভবন- উত্তরা গণভবন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি জীবনানন্দের বনলতা সেন এ সবকিছু নিয়ে একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে নাটোর। কিন্তু এত কিছু ছাপিয়েও নাটোরের নাম এলেই যে নামটি সকলের আগে মনে আসে তা হল নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা।
মিষ্টি রসিক বাঙ্গালিদের যারা কাঁচাগোল্লার স্বাদটি চেখে দেখেননি তাদের কাছে নামটি একটি রহস্যই থেকে যাবে। রীতিমতো জ্বাল করে কড়াই এ নেড়েচেড়ে বানানো এই সুস্বাদু মিষ্টিটি শেষ পর্যন্ত কিভাবে কাঁচা থাকে তা বলা মুশকিল। যুক্তিতে না মিললেও এর নাম রয়ে গেছে‘কাঁচাগোল্লা।’
নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লা প্রায় দুই আরাই’শ বছরের পুড়নো সুস্বাদু মিষ্টি। লোকমুখে প্রচলিত আছে, রানি ভবানীর সময় নাটোরের রাজ পরিবারে মিষ্টি সরবরাহ করতেন মধুসুধন দাস ।
রসগোল্লা, পানতোয়া, সন্দেশ, চমচমকে হার মানিয়ে দিল এই কাঁচাগোল্লার স্বাদ। মধুসুধন এই মিষ্টি স্থানীয়দের মাঝে বিক্রি করেন এবং পাঠিয়ে দেন রাজসভায়। যা খেয়ে বুদ হয়ে যান রাজাও। এরপর থেকে রাজা নিয়মিত ভাবে এই মিষ্টি সরবরাহ করতে বলেন মধুসুদনকে।
নাটোরের কাঁচাগোল্লা তৈরির প্রক্রিয়া জানতে চাইলে মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কারিগররা বলেন, প্রথমে দুধ থেকে ছানা তৈরি করতে হয়। ছানা পরিস্কার কাপড়ে রেখে শক্ত করে চাপতে হবে যাতে পানি না থাকে। ৭ কেজি দুধ থেকে পাওয়া যাবে ১ কেজি ছানা এবং প্রতি কেজি ছানার জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম চিনি দিয়ে জাল দিতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট চিনির রস জ্বাল দেয়ার পর ছানাগুলো রসে ঢেলে দিতে হবে। এরপর আবার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট জ্বাল দিয়ে ভালভাবে নাড়তে হবে। সুগন্ধের জন্য এলাচের গুঁড়া ছড়িয়ে দিতে হবে। ব্যাস এভাবেই তৈরি হয়ে গেল কাঁচাগোল্লা।
১৭৫২ সালে নাটোর রাজত্বের ভার অর্ধবঙ্গেশবরি খ্যাঁত রানি ভবানীর হাতে পরার পর থেকে কাঁচাগোল্লার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশ বিদেশে। সে সময় রাজা-জমিদারদের আপ্যায়নের জন্য দেয়া হত এই প্রসিদ্ধ মিষ্টি। এছাড়াপূজা-পার্বণে প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হতো এই কাঁচাগোল্লা।
পরবর্তী খবর ‘কলেজ পাশ করতে পারিনি তবু আমি সফল’