বিয়ের পরে সন্তান নেয়ায় দেরি নয়
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৭শে নভেম্বর ২০১৭, সোমবার
| সন্ধ্যা ০৬:৫২
দেশ
ই-বার্তা।। নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে, ভাবছেন এখনই সময় আনন্দ করার। জামাইয়ের সাথে চার/পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম আর মজা করে নেই তারপর ফ্যামিলি প্ল্যানিং অর্থাৎ বাচ্চা নেয়ার কথা ভাবা যাবে। সময় তো অনেক আছে। কিন্তু এটিই আপনার সবথেকে বড় ভূল সিদ্ধান্ত। কারণ সময় কারোর জন্য অপেক্ষা করেনা। দুই/চার/পাঁচ বছরে কিন্তু আপনার বয়স থেমে নেই। আপনিও বাড়িয়ে চলেছেন বয়সের খাতা।
আপনাকেই বলছি, বাংলাদেশে বর্তমান নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা জানেন কি? এটি প্রায় ৩০ লক্ষ। চোখ কপালে তোলার মতো সংখ্যা কি এটি নয়? তাহলে খুব বেশি দেরিও নেই এই সংখ্যা বাড়তে। কারণ প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দেশের সবগুলো হাসপাতালে গেলেই ইনফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট সেন্টারগুলোতে দেখা মিলবে নিঃসন্তান দম্পতির কি বিশাল সংখ্যা।
একটি সন্তানের কামনা যে কী তীব্র হতে পারে তা শুধু নিজেই অনুভব করলে বোঝা সম্ভব। কেন আপনাকে এই হাহাকারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে যখন আপনি চাইলেই এই অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন? শুধু মনে রাখতে হবে সঠিক সময় কোনটা। সঠিক সময়ে সন্তান গ্রহণ করলে আপনার পরিবার পূর্ণ হবে আর একটি সুস্থ সবল শিশু পৃথিবীতে আসবে।
খুব বেশি আগের কথাও নয়, আমাদের বাবা-মায়েরাই অনেকগুলো ভাইবোন। অথচ এখনকার পরিবারগুলোতে একটি বা দুটি সন্তানের বেশি চোখেই পড়েনা। আর সন্তান নিতে চেয়ে বিপাকে পরেনি এমন দম্পতিও কম চোখে পরে। নানান শারীরিক সমস্যায় পরতে হয় এখনকার মেয়েদের প্রেগ্নেন্সির সময়। অনেকেই শারীরিক সমস্যার কারণে কনসিভ করতে চায়না সহজে আবার অনেকের কনসিভের পর মিসকারেজ হয়ে যায়। এত অল্প সময়ে এত পরিবর্তনের কারণ নিয়ে কখনো ভেবেছেন? ভাবলেই উত্তর পেয়ে যাবেন আর তা আপনাকে অবাক করে দিবে। কারণ এরকম অসুবিধার কারণ তো আপনি নিজেই! চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
১। অনেকেই মনে করেন মাত্র বিয়ে হল, কয়েক বছর এনজয় করি, ক্যারিয়ার গড়ি তারপর বাচ্চা নেয়া যাবে। বাচ্চা নেয়ার কথা আপাতত না ভাবলেও কিন্তু আপনার শারীরিক মেলামেশা বন্ধ থাকেনা। তাইতো শুরু হয়ে যায় সহবাসের সময় ও সহবাস পরবর্তী নানা রকম প্রোটেকশনের ব্যবহার। জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল খাওয়া শুরু করেন মেয়েরা। যদিও পিলগুলোর গায়ে লেখা থাকে “সম্পূর্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত”। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, একটি ওষুধ আপনার প্রতি মাসের পিরিওড সাইকেলে হরমোনাল চেন্জ নিয়ে আসছে যেটা স্পার্ম এবং ওভামকে উর্বর হতে দিচ্ছে না। প্রতি মাসে একজন মেয়ে ৩০টা পিল খাচ্ছেন। এইভাবে দুই/তিন বছর চলার পর আপনার শরীরের হরমোনাল অবস্থা যে স্বাভাবিক থাকবে তা আপনি জোর দিয়ে বলতে পারেন? শুধু আপনি কেন, কোনো ডাক্তারই দীর্ঘ সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষপাতি নয়। কারণ দীর্ঘ সময় ওষুধ সেবন করলে মেয়েদের শরীরের উর্বরতার হার অনেক ক্ষেত্রেই দূর্বল হয়ে যায়।
২। যারা নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ
পিল খান না তাদেরকে আশ্রয় নিতে হয় ইমারজেন্সি পিলের কাছে। এক্সিডেন্টাল প্রেগন্যান্সি এড়াতে এই পিলগুলো খাওয়া হয়। এক্সিডেন্টাল প্রেগনেন্সি আসলে কি? আপনার শরীরে গর্ভধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বুঝতে পেরে আপনি এই ওষুধ গ্রহন করেন যা আপনার শারীরিক প্রক্রিয়ার সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে প্রেগনেন্সি ঠেকায়। এই ইমারজেন্সি পিল গ্রহনের ফলে মেয়েদের পরবর্তীতে একটোপিক প্রেগন্যান্সি হয়। অর্থাৎ আপনার গর্ভের সন্তান ইউটেরাসে না হয়ে অন্য কোন জায়গায় হবে এবং বড় হতে থাকবে। এই অবস্থা ধরা পরলে গর্ভবতীর ইউটেরাস অপারেশানের মাধ্যমে কেটে ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
৩। অতিরিক্ত চাপে থাকাও কনসিভ না করার অন্যতম একটি কারণ। বিশেষ করে চাকুরিজীবি মেয়েদের ক্ষেত্রে। অনেক কাজের চাপ ও মানসিক চাপ থাকলেও ফার্টিলিটি কমে যায়। আবার অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ও শব্দে বেশি সময় অবস্থান করলেও কনসিভ করার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
৪। আরোও ভয়াবহ স্টেজ হোলো এবোরশান। অনেকেই ভুলক্রমে(?) প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে এখনই সময় না, এখনই রেডি না এমন নানান কারণ দেখিয়ে এবোরশান করিয়ে ফেলে। এক কথায় ইউটেরাস থেকে শিশু ভ্রণকে প্রচুর রক্তক্ষরনের মাধ্যমে বের করে মেরে ফেলা। একটা মায়ের উপর এতগুলো ধকল যাওয়ার ৩/৪ বছর পর যখন ফাইনালি দম্পতি সিদ্ধান্তে আসে এবারে একটা বাচ্চা চাই, ততদিনে সেই মায়ের শারীরিক অবস্থা খুব ভালো থাকবে এটা আসা করা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
জটিলতা দেখা দিলেই এরপর হাসপাতালে ছোটাছুটি শুরু। নানান চিকিৎসা আর সেইসাথে তাবিজ-কবচও কম করা হয়না। অনেক চিকিৎসার পরে যদিওবা কনসিভ করায় সফল হন একজন মা, তখন প্রেগনেন্সির সময় দেখা যায় নানান জটিলতা। হয়তো বাচ্চার পজিশন ঠিক জায়গায় নেই। মায়ের মিসকারেজের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এরকম নানান হুমকির মাঝে দিন পার করতে হয় দম্পতিকে।
ইনফার্টিলিটি শুধু যে মেয়েদের হয় তা কিন্তু নয়। ছেরেদেরও এই হার কম নয়। পুরুষের ইনফার্টিলিটির প্রধান কারণ প্রতি মিলি লিটারে স্পার্ম সংখ্যা ২০ মিলিয়নের কম হয়ে যাওয়া। ধুমপান করা বা যেকোন ধরনের নেশা করা, পরিবেশ দূষন, শব্দ দূষণ এগুলো ছেলেদের ইনফার্টিলিটির কারণ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য কারন হল টাইট পোষাক পরা। স্কিন টাইট জিন্স পরলে অতিরিক্ত চাপের কারনে স্পার্ম সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে।
ক্যারিয়ার ও জীবনকে এনজয় করার নামে নিজেদের দুই/তিন বছর আনন্দময় করে বাকি জীবনটা অভিশাপে পরিণত না করে বিয়ের পরপরই ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে নিন। সন্তানই তো পারে আপনার পারিবারিক বন্ধন ও আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনকে আরো শক্ত ও মজবুদ করতে। তাহলে সেই সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে এতো অবহেলা কেন? বিয়ের দুই চার বছর পর আর সন্তান না হলে পরিবারে আপনার ভালোবাসা, সম্মান দুটোই খোয়া যাবে। আর আপনিও মানসিকভাবে কোনোদিন শান্তি পাবেন না।
আগের খবর রবীন্দ্র সরোবরে নবান্ন মেলা
পরবর্তী খবর বাংলাদেশে ড্রাগন