বাংলাদেশে ড্রাগন
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৯শে নভেম্বর ২০১৭, বুধবার
| বিকাল ০৫:৩১
দেশ
ই-বার্তা ডেস্ক।। বান্দরবানের রুমা এলাকার নাম সবাই শুনেছেন। কিন্তু সেখানকার ড্রাগনের কথা জানেন কি? শুনেই অবাক লাগছে তাইনা, ড্রাগন আসতে যাবে কোথা থেকে? এটি তো শুধুই গল্পে সম্ভব। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে একটা গল্প বলে নেই।
অনেক অনেক বছর আগে রুমা এলাকায় চোঙাকৃতির একটি পাহাড় ছিল। সেই পাহাড় ঘেষে বসবাস করতো অনেক মানুষ। ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা প্রভৃতি নৃগোষ্ঠীর ছিল সেইসব মানুষ। একদিন সেই পাহাড়ে নেমে এলো এক ড্রাগন। ড্রাগনের আরেক নাম হোলো বগা। বগাকে ঠান্ডা রাখতে গ্রামের মানুষেরা বিভিন্ন পশুপাখি উপহার দিতে থাকে। তাঁরা ভাবে স্বয়ং ঈশ্বর তাঁদের উপর রুষ্ট হয়ে ড্রাগনের রুপ ধরে ধরায় নেমে এসেছে। সেই ড্রাগন নানান ভাবে এলাকার মানুষদের অত্যাচার করতে শুরু করে এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের খেয়ে ফেলা শুরু করে। ড্রাগনের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সব সম্প্রদায়ের সাহসী যুবকেরা একবার হানা দিলো সেই ড্রাগনের আস্তানায়। রাতের অন্ধকারে তীর, ধনুক, লাঠি, বল্লম, মশাল নিয়ে অতর্কিতে তাঁরা হামলা চালায় ড্রাগনের উপর। হঠাৎ আক্রমণে কুলিয়ে উঠতে না পেরে পালানোর জন্য নিজের রথে উঠে বসল ড্রাগন। কিন্তু শেষ রক্ষা হোলো না। রথে আগুন ধরিয়ে দিল যুবকরা। সেই আগুনে পুড়ে মরল বগা আর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভেঙে পড়ল পাহাড়। তৈরি হলো বিশাল এক গর্ত। সেই গর্তে বছরের পর বছর বৃষ্টির পানি জমে জায়গাটা একটা জলাভূমিতে পরিণত হোলো।
এই হোলো আমার গল্প। আর এই জলাভূমিটাই হোলো বর্তমানের বগা লেক। যার অন্য নাম ড্রাগনের হ্রদ। বগা লেকের পুরো নাম বগাকাইন হ্রদ। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে কেওক্র্যাডং পর্বতের গা ঘেঁষে হ্রদটি অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় দুই হাজার ফুট। দেশের ভূতাত্তিকদের হিসেব অনুযায়ী বগাকাইন হ্রদটি হয় মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের কারণে সৃষ্ট। এর গভীরতা সর্বোচ্চ ৩৫ মিটার। অদ্ভূতভাবে চোঙা আকারের আরেকটি পাহাড়ের চূড়ায় বগা লেকের অবস্থান দেখতে একদম আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতোই। লোককথার ড্রাগনের বিস্ফোরণের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মিল রয়েছে। এমনতো হতে পারে হঠাৎ বিস্ফরণের দৃশ্য দূর থেকে অনেক মানুষ দেখেছে আর তারাই এই গল্প বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে সেখানে একটি ড্রাগন ছিলো।
বগা লেকের পানি অম্লধর্মী। কোনো জলজ প্রাণী এখানে বাঁচতে পারে না। বাইরের কোনো পানি এখানে ঢুকতে পারে না, আর হ্রদের পানি বেরোতেও পারেনা। আবার আশপাশে পানির কোনো দৃশ্যমান উৎসও নেই। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে হ্রদের পানি যখন ঘোলাটে হয়, আশপাশের ছোট ছোট জলাশয়ের পানিও ঘোলাটে হয়ে যায়। এর তলদেশে একটি গরম পানির প্রবাহ আছে। গরম পানি বেরোনোর সময় হ্রদের পানির রং বদলে যায়। স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর কাছে পানির এই তাপমাত্রা ও রঙ বদলটাই এখনো একটি রহস্য।
আগের খবর বিয়ের পরে সন্তান নেয়ায় দেরি নয়