প্রাচীন আরব নগরী ‘পেত্রা’র রহস্য !


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৮ই মে ২০১৭, সোমবার  | রাত ১০:২২ বিদেশ

তারিকুল হাসান

‘পেত্রা’ আরবের একটি প্রাচীন নগরী। প্রাচীন এই পাথরের নগরীর পাথরের রঙ গোলাপ বর্ণের জন্য শহরটিকে গোলাপের শহর বলা হয়। যার আরেকটি বড় পরিচয় হচ্ছে, এটি বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি।

শহরটি লোহিত/মৃত সাগর থেকে প্রায় ৮০ কিমি দূরে জর্দানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি গ্রাম ‘ওয়াদি মুসা’-র ঠিক পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।

পেত্রা নগরী ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এটি বিখ্যাত ছিল এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর জন্য। পেত্রা নগরী তৈরি হয়েছিল গুহার মধ্যে। এর কোনো কোনো স্থান ১২ ফুট চওড়া, মাথার ওপরে পাথরের দেয়াল। গুহার পাশেই রয়েছে কঠিন পাথরের দেয়ালের গায়ে গ্রথিত সেই প্রাচীন দালানগুলো যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ‘খাজনেত ফিরাউন’ নামের মন্দিরটি। মন্দিরটি ফারাওদের ধনভান্ডার নামেও পরিচিত। দালান, মন্দির ছাড়াও এই নগরীতে বিনোদনের জন্য স্টেডিয়ামের মতো তৈরি করা একটি অর্ধগোলাকৃতির নাট্যশালাও রয়েছে, এ নাট্যশালা এতটাই সুপ্রশস্ত যে, সেখানে প্রায় তিন হাজার দর্শক একসঙ্গে বসতে পারে। শুধু তাই নয়, পেত্রার চারধারে ছিল উঁচু পাহাড় আর এসব পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসত স্বচ্ছ জলের ঝরনা ধারা।

পেত্রা নগরীটি এমন সুবিধাজনক যায়গায় নির্মিত হয়েছিল, যেখান থেকে পশ্চিমের গাঁজা, উত্তরের বসরা ও দামেস্ক, মৃত/লোহিত সাগরের পাশের আকুয়াবা ও লিউস সহ মরুভূমির উপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার প্রধান সব বাণিজ্যিক পথ গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো পেত্রারা। মূলত একারণেই নগরীটি অর্থনৈতিক ভাবে বেশী সমৃদ্ধ এবং নিরাপত্তার দিক দিয়েও অনেক সুরক্ষিত ছিল।


খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ পর্যন্ত এটি ছিল আরবের নাবতাইন রাজ্যের রাজধানী। তখনই নগরীটি সম্পূর্ণ সমৃদ্ধ নগরীরূপে ছিল, পেত্রারা সবথেকে শক্তিশালী ছিল। পরবর্তিতে রোমান শাসনের সময় রোমানরা সমুদ্র কেন্দ্রিক বাণিজ্য শুরু করলে পেত্রাদের আধিপত্য কমে যায় একইসাথে অর্থনৈতিক ভাবে পেত্রারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এবং ১০৬ খ্রিটাব্দে এসে রোমানরা এটিকে দখল করে তাদের ‘আরব পেত্রাইয়া’ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে শহরটির কিছুটা উন্নতি সাধন করা হলেও,পরবর্তীতে পেত্রার প্রতিদ্বন্দ্বী শহর ‘পামিরা’ পেত্রাদের অধিকাংশ বাণিজ্য দখল করে ফেললে পেত্রার গুরুত্ব একেবারেই কমে যায়। সপ্তম শতকের দিকে মুসলমানরা এটিকে দখল করলেও দ্বাদশ শতকে ক্রুসেডারটা এটিকে দখল করে। এভাবে সময়ের ব্যাবধানে, যুদ্ধ বিদ্রোহ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে পেত্রা নগরী একসময় প্রায়ই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া ৩৬৩ সালে এক ভূমিকম্প ধ্বংস করে দেয় এর দালানগুলো, নষ্ট করে দেয় এর পানি সঞ্চালন ব্যবস্থাকে।

মধ্যযুগে এসে পেত্রার ধ্বংসাবশেষ আবার মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হতে থাকে। ত্রয়োদশ শতকে মিসরের সুলতান বাইবারস পেত্রার ধ্বংসাবশেষ দেখতে যান।এরপর বহু বহু বছর নগরীটি মানুষের আলচোনার বাইরে থাকার পর ১৮১২ সালে সুইস পরিব্রাজক জোহান লুডিগ বুর্খার্দত এটিকে পশ্চিমা বিশ্বের নিকট নতুন ভাবে উপস্থাপন করেন এবং ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে ‘বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে ঘোষণা করে। যে ঘোষণায় বলা হয়,“সম্পদ আর ক্ষমতায় পেত্রারা যে একসময় কতটা সমৃদ্ধ ছিল তা প্রমাণ করতে পেত্রাদের ধ্বংসাবশেষই যথেষ্ট।”

তথ্যঃ উইকি, গুগল।
ছবিঃ গুগল।

সর্বশেষ সংবাদ

বিদেশ এর আরও সংবাদ