রসালো টসটসে লিচু
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৮ই মে ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| সন্ধ্যা ০৬:৫৫
দেশ
তারিকুল হাসান, (গুরুদাসপুর) নাটোর
মধু মাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফল লিচু। লাল টসটসে রসালো লোভনীয় সুন্দর এই ফল দেখলে খেতে ইচ্ছে করেনা এমন মানুষের জুরি মেলা ভার। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার-ই যেন জিভে জল এসে যায় মৌসুমি এই ফল খাওয়ার জন্য। সুমিষ্ট এই ফলের খোসা ছিলে মুখে দিলেই যেন রসে মুখটা ভরে যায়। মন থেকে বের হয়ে আসে প্রশান্তির একটি শব্দ, আহ!
নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বটতলায় যেন মেলা বসেছে সুস্বাদু এই ফলের। লিচুর এই মোকামে রাস্তার দুপাশে লিচুর স্তূপের আভায় রঙিন হয়ে উঠেছে চারিদিক। এরই মধ্যে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার হাকডাক, চলছে বিকিকিনি।
প্রকাশ্য ডাকের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া এসব লিচু ঝুড়িতে সাজিয়ে ট্রাকে করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নারায়নগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবং ফড়িয়ারা অল্প কিনে স্থানীয় হাট-বাজারেবিক্রি করেন।
মৌসুমি এই ফলের বাজার জমে থাকে পুরো মধুমাস জুড়েই। দুপুর ১২ টা থেকে শুরু করে রাত ১০টাপ্রজন্ত চলে এই লিচুর মোকামের কর্মকাণ্ড। আকার ও মান অনুযায়ী প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়। তবে এক সপ্তাহ পরে লিচুর দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা। মায়ের দোয়া বাণিজ্যলয়, মেহেদি ফল ভাণ্ডার, মক্কা-মদিনা ফল ভাণ্ডার, ছাফা ফল ভাণ্ডার, মেসাস মোল্লা ট্রেডাস সহ ১৪ থেকে ১৫ টি আড়তে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমি এই ফল।
বেড়গঙ্গারামপুর ফল সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব সাখায়াত হোসেন বলেন, ‘ গুরুদাসপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লিচুর এই মোকাম গড়ে উঠলেও এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। বাজারে এখন বেশি মোজাপফোর জাতের লিচু, কয়েকদিন পর বাজারে আসবে বোম্বাই জাতের লিচু। প্রতিদিন লিচুর এই মোকামকে কেন্দ্র করে৩০০-৪০০ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
‘এই মোকাম থেকে ঝুড়িতে সাজিয়ে৩০-৪০ ট্রাক লিচু প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারীরা। ঝুড়ির আকার অনুযায়ী ১০০০ থেকে ২০০০ লিচু ধরে প্রত্যেকটিতে। মাঝারি ট্রাকে ১০০-১২০ এবং বড় ট্রাকে ২০০ থেকে ২২০ টি ঝুড়ি সাজানো হয়। লিচুর মান ভাল রাখার জন্য ঝুড়ি সাজানোর কাজে ব্যবহৃত দেবদার গাছের সবুজ পাতা বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন স্থানীয়রা। প্রতি ভ্যান দেবদার গাছের পাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। এছাড়া লিচু বহনের জন্য বাঁশের তৈরি ঝুড়ির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে এই মোকামে।’
মাহমুদপুর, বেড়মাহমুদপুর, বিয়াঘাট, গুপিনাথপুর, নাজিরপুর, রশিদপুর, লক্ষ্মীপুর, চন্দ্রপুর, কুমারখালি, সোনাপুর সহ আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন লিচুর বাগান ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি লিচুর গাছে ধরে আছে ঝোপা ঝোপা লিচু। লিচুর ভরে মাটিতে নুয়ে পড়েছে ডালপালাগুলি। সত্যি, সে এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য।
বাগানে বাগানে এখন চলছে লিচু ভাঙ্গার ধুম। গাছ থেকে লিচু পেড়ে, লিচুর ঝুড়ি ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কানু মোল্লার বটতলার মোকামে। অনেক বাগানমালিক আবার বাগান থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন লিচু।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম জানান, গুরুদাসপুরে এবার ৪১০ হেক্টর জমিতে মোজাফোরপুরি, বোম্বাই, চায়না-৩ ইত্যাদি জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন।এছারা যখন ফল থাকেনা তখন লিচু বাগানে সাথি ফসল চাষ করে লাভবান হয়েছেন শত শত বাগান মালিক। শতভাগ ফরমালিনমুক্ত এসব লিচু বাগান থেকে সরাসরি ভোক্তার হাতে যাচ্ছে বলে চাহিদা অনেক বেশি।
ওই কর্মকর্তার তথ্যমতে, প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা।
কথা হয় মাহমুদপুরের লিচু চাষি আব্দুর রহিম এর সাথে তিনি বলেন, ‘ আমার ২ বিঘা জমিতে ১৭ টা গাছে এবার প্রায় ১ লাখ লিচু এসেছে। সার, কীটনাশক এবং শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকার মত টিকবে। রোদ এবং বৃষ্টির জন্য অনেক লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে পরে আবহাওয়া অনুকূলে আসায় লিচুর বৃদ্ধি হয়েছে।’
দেশের বিভিন্ন জেলায় ভাল জাতের লিচু চাষ হলেও গুরুদাসপুরের লিচুর কদর কম নয় অনেক বেশি। নাটোরের লিচু প্রসিদ্ধ বলে জানান ভৈরব, কিশোরগঞ্জের ফল ব্যবসায়ী মোঃ তায়েব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গুরুদাসপুরের লিচুর আকার, রঙ এবং স্বাদ সবই ভাল। এখানকার লিচুর মান ভাল হওয়ায় কিশোরগঞ্জে প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়।
‘আমি আড়তের পাশাপাশি মাঝেমাঝে বাগান থেকেও লিচু কিনি। বাগান থেকে লিচু কেনার সুবিধা একটু বেশি। বাগান মালিকেরা গাছ থেকে লিচু পেড়ে ঝুড়িতে প্যাকেট করে দেন এবং বাগানের লিচুতে কোনো কমিশন দিতে হয়না।’
আড়তে শতকরা ৮ টাকা কমিশন নিলেও ব্যাপারীরা নিরাপত্তার সাথে আড়ত থেকে লিচু কিনতে পারেন এবং ব্যাপারীদের ভাল থাকা এবং খাওয়ার ব্যাবস্থা আছে আমার আড়তে বলে জানান মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয় এর পরিচালক আব্দুল মান্নান।
আগের খবর জ্যৈষ্ঠে বর্ষার কদম ফুল
পরবর্তী খবর বাজারে আসতে শুরু করেছে বাহারি ফল