সাদা মনের মানুষ সুব্রত ভট্টাচার্য- চতুর্থ পর্ব
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২২শে মে ২০১৭, সোমবার
| বিকাল ০৩:০৭
দেশ
কথায় বলে, "অভাবে স্বভাব নষ্ট"। আমি বলবো, শুধু অভাবে না প্রভাবেও স্বভাব নষ্ট হয়। অভাব মানে দারিদ্র্য আর প্রভাব মানে পামপট্টি। এই দুটো বিষয়ই সুব্রত ভট্টাচার্যকে বিষধর সাপের মতো দংশন করলেও আহত করতে পারেনি। কারণ তাঁর আছে প্রখর মানসিক শক্তি। জমিদার ও ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অভাবের কারণে তিনি স্নাতকোত্তর করতে পারেননি। এটি ছিল তাঁর ছাত্রজীবনে ১৯৬৬ সালের চরম ট্রাজেডি । তীব্র দুঃখ থাকলেও হতাশা তাঁর চলার পথের কাঁটা হয়নি। এদিকে সুব্রত ভট্টাচার্যের আদর্শ, মেধা, দক্ষতা দেখে অনেকেই তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন স্কুলের চাকুরিটা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো কাস্টমস কিংবা সাব- রেজিস্টারের মতো পয়সওয়ালা চাকুরি নেয়ার জন্য। অফারও যে আসেনি তা নয়। কিন্তু পামপট্টি যে সব জায়গায় সবার ক্ষেত্রে খাঁটেনা এই কথা কজন বোঝে? অভাব আর প্রভাব দুটোকেই লাথি মেরে যিনি এগিয়ে চলেন, তিনি বাড়ি-গাড়ি কিংবা কোটি কোটি টাকার মালিক না হলেও কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় হয়ে ওঠেন চিরঞ্জীব ও সদা প্রফুল্ল-প্রশান্তিময় প্রজ্ঞাপুরুষ। যাঁদের মধ্যে সুব্রত ভট্টাচার্য অন্যতম।
"আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু, ভালোবাসো মোর গান"। দুঃখবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই গানকে মননে-মেধায় লালন ও ধারণ করে সুব্রত ভট্টাচার্য ঐক্যের গান করছেন। এ ঐক্য মহান মে দিবসে শ্রমিক ভাইয়েরা যেমন সমবেত কন্ঠে বলেন,"দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করো", আর সুব্রত ভট্টাচার্যের আহবান ঐ একই সুরে ভীন্ন ভাষায়, "দুনিয়ার সব মানুষ, এক হও ভালোবাসো"। এই অপরিমেয় শক্তি সুধা পান করেন বলেই যেখানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১ সেখানে প্রায় ৭৪ বছরের এই সাধক এখনো দাপটের সহিত কাজ করে যাচ্ছেন।
আমার বেশ মনে পড়ছে, ফেব্রয়ারি ২০০০ সালের কথা। বাংলাদেশ লোকসংগীত কেন্দ্র, কুড়িগ্রাম জেলার সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি বিশাল সাংস্কৃতিক দল ঢাকা বাংলা একাডেমির অহংকারি মঞ্চ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করবার। সেদিন ছিল ১২ ফেব্রয়ারি । যে অনুষ্ঠানে সুব্রত ভট্টাচার্যের পরিচালনায় গান করেছিলেন সাজু আহমেদ ( বর্তমানে সে ক্লোজ-আপ ওয়ান তারকা ), ভূপতিভূষণ বর্মা ( উলিপুর ভাওয়াইয়া একডেমির প্রতিষ্ঠাতা ), শেখ জোছনা ও নাগেশ্বরীর রিক্সাওয়ালা ভাই গাজীবর রহমানসহ অনেকে । সুব্রত ভট্টাচার্যকে একটি সার্থক অনুষ্ঠানের জন্য বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে যে এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছিল তা কোটি কোটি অর্থের চেয়ে অনেক মূল্যবান। এটি সম্ভব হয়েছে তাঁর নিরলস ও ঐকান্তিক পরিশ্রমের বিনিময়ে।
২০১১ সালে তত্তাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় গঠন করা হয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। সেইসময়ের দুদক মহপরিচালক ড. হাসান মাসুদের ডাকে নাগেশ্বরীতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটির সহ- সভাপতি হিসেবে এখনো সুব্রত ভট্টাচার্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
রেজাউল করিম রেজা
(লেখাটি চলবে, চোখ রাখুন)
পরবর্তী খবর গরমে আরামে ঘুমাতে চাইলে যা যা করতে হবে