আসুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৪শে মে ২০১৭, বুধবার
| দুপুর ০২:৫৯
মেডিকেল
সারা দেশে এখন চলছে তীব্র গরম। রোদের প্রখর তাপে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই অবস্থায় মানুষ খুব তারাতাড়ি আক্রান্ত হতে পারে হিট স্ট্রোকে। প্রচণ্ড গরমের কারণেই সাধারণত ‘হিট স্ট্রোক’ হয়। মানুষের শরীরে যখন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, তখন তাকে হিট স্ট্রোক বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান করলে বা শারিরিক শ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়না। অনেকের প্রাণহানি ঘটে হিট স্ট্রোকের ফলে। তাই এই গরমে জীবন বাঁচাতে প্রত্যেকেরই হিট স্ট্রোক সম্পর্কে জানতে হবে এবং সাবধাণতা অবলম্বন করতে হবে।
হিট স্ট্রোক কাদের হয়?
সকল বয়সের মানুষের হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন, শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকে বলে এদের হিট স্ট্রোক সহজেই হতে পারে। যাদেরকে রোদে দীর্ঘক্ষন কাজ করতে হয়, তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে সেইসাথে এমন কিছু ওষুধ আছে যা সেবন করলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন, বিষণ্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি। হিট স্ট্রোকে কখনো কখনো ব্যক্তির প্রেশার একেবারেই কমে যায় অথবা অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি চেতনা হারিয়ে ফেলেন।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ-
মাংসপেশিতে ব্যথা, দুর্বল লাগা এবং প্রচণ্ড পিপাসা পাওয়া এগুলো হোলো হিত স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। এর পরের ধাপে রোগীর দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। এই অবস্থায় রোগীর অবস্থা খুব মারাত্মক কিছু হয়না। দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে রোগী সুস্থ হতে পারে। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে গেলে রোগীর হিট স্ট্রোক হতে পারে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হোলো,
১। শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যাওয়া।
২। শরীর ঘামা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৩। হৃদস্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া।
৪। রক্তচাপ অনেক কমে যাওয়া বা অনেক বেড়ে যাওয়া।
৫। খিঁচুনি হওয়া।
৬। মাথা ঘুরা এবং রোগীর অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকা।
৭। অনেক সময় রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
হিট স্ট্রোকের চিকিৎসা-
১। হিট স্ট্রোকের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলেই প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে। স্যালাইন পানি এই সময় খুবই উপকারী।
২। অন্য কারো সাহায্য নিয়ে ওই স্থান বর্জন করে ঠান্ডা স্থানে চলে যেতে হবে। সম্ভব হলে ফ্যান বা এসির নিচে যেতে হবে।
৩। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সবরকম প্রাথমিক চিকিৎসা করা যেতে পারে। যেমন, ঠান্ডা পানিতে গামছা ভিজিয়ে বারবার রোগীর শরীর মুছে দেয়া ও বাতাস করা।
৪। দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
হিট স্ট্রোকের প্রতিরোধ-
১। প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। সেলাইন পানি নিয়মিত পান করতে হবে। এছাড়া ডাবের পানি, লেবু পানি, ফলের জুস প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এসময় চা বা কফি যথাসম্ভব কম পান করতে হবে। কারণ চা জাতীয় পানীয় শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়।
২। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরনোই ভালো। বাইরে কাজ থাকলেও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন রোদে খুব বেশি সময় না থাকা লাগে। সবসময় সাথে ছাতা এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি রাখতে হবে। কাজের ফাঁকে কিছুক্ষন পরপর পানি পান করতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে। একটানা কখনোই কষ্টসাধ্য কাজ করা যাবেনা।
৩। বাইরে থেকে বাসায় ফিরে গোসল করে নিতে হবে। একাধিকবার গোসল করা যেতে পারে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনেকেরই একধিকবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে জ্বর হয়, তাঁদের বারবার গোসল না করে যথাসম্ভব ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে।
৪। খুব চাপা পোশাক না পরিধান করে হালকা রঙের ঢিলাঢালা পোশাক পরতে হবে যাতে শরীরে বাতাস প্রবেশ করতে পারে। সিল্ক বা জর্জেট জাতীয় কাপড় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এগুলো বাতাসরোধী। সুতি কাপড় পরিধান করা উত্তম।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্)
স্কয়ার হাসপাতাল ঢাকা
ডায়াবেটোলজি, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
ই-মেইল- farhanamobin31@yahoo.com
পরবর্তী খবর ডায়াবেটিক রোগীর রোজা পালন ও খাদ্য তালিকা