সাদা মনের মানুষ সুব্রত ভট্টাচার্য- নবম পর্ব
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৮ই জুন ২০১৭, রবিবার
| সকাল ১১:৪৯
দেশ
“মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই" - রবি ঠাকুরের এই অমর কথাকে পাথেয় করে পথে পথে নিরন্তর মানুষের ভালোবাসা সঞ্চয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন সুব্রত ভট্টাচার্য। উদ্দেশ্য, মানুষের মাঝেই বেঁচে থাকা। কারণ, তিনি জানেন ভালোবাসা অমর। ভালোবাসাই জীবন। ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা পাওয়া যায়। তাই, ভালোবাসার পাহাড়ে উঠে সুব্রত ভট্টাচার্য যে জীবনের স্বাদ পেয়েছেন, সে জীবনের নাম তিনি দিয়েছেন অমর জীবন। কিন্তু তিনি জানেন এবং মানেন, অমর জীবনের অমরত্ব লাভ করতে হলে ত্যাগ স্বীকার তাঁকে করতেই হবে। সংযমি হতে হবে। হয়তো এজন্য জীবনে চলার পথে অনেক আঘাত আসলেও তিনি একটিবারের জন্যও পিছ পা হননি। আর এই পিছ পা হননি বলেই জীবনের প্রতিটি শাখায় তিনি সফল মানুষ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পেরেছেন।
প্রতিটি মানুষের তিনটি করে জীবন।
১। ব্যক্তিগত জীবন
২। পারিবারিক জীবন
৩। সমষ্টিগত জীবন
এই তিনটি জীবনে একজন মানুষ যদি পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেন তবেই তিনি সার্থক এবং সাধক ।
প্রথমেই আসা যাক ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে । যার নাম অত্যন্ত কঠিন ও সংগ্রামী জীবন। ব্যক্তিগত জীবন মানে একান্ত নিজস্ব জীবন। যে জীবনে প্রবেশ করবার অধিকার কাউকেই দেয়া হয় না। অর্থাৎ সংসারের অতি আপন মানুষটি ১০০ বছর পাশাপাশি থাকার পরও একে অন্যের ব্যক্তিগত জীবনের কোনো খবর রাখতে পারেন না, অন্য লোক তো দুরের কথা। অথচ, সুব্রত ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রে ঘটলো তার ঠিক উল্টোটা। গোপনীয়তা বলে তাঁর জীবনে কিছুই নেই। মাত্র ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল তাঁর। স্ত্রীকে দেয়া কথা রাখতে গিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি নারী সঙ্গহীন নিঃসঙ্গ একাকী জীবন কাটিয়ে দিলেন। বাকী জীবনেও এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটবার সুযোগ আর নেই। ধুমপান, মাদক ও মারণাত্মক কোনো নেশা তাঁকে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে স্পর্শ করতে পারেনি প্রায় ৭৪ বছরের এ জীবনে। লোভ-লালসা, হিংসা-প্রতিহিংসার উর্দ্ধে থেকে তিনি নিজেকে নিজের মতো মানিয়ে নিয়েছেন। তাইতো উদাত্ত কন্ঠে তিনি বলেন, "আমি তোমারই নই, আমি তোমারও"। অর্থাৎ একক কোনো ব্যক্তির তিনি নন, তিনি সবার হতে চান। সবাতে আমি আমাতে সব এটাই সুব্রত ভট্টাচার্যের অনুভব। আর এই অনুভব তাঁকে অমরত্ব দান করেছে নিঃসন্দেহে।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে আরো তিনটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, আছে এবং আজীবন থাকবে। এই তিনটি বিষয় হচ্ছে শারীরিক ব্যায়াম, মানসিক ব্যায়াম ও আধ্যাত্মিক ব্যায়াম। তিনি সকল ক্লাসে, বক্তব্যে, সেমিনারে এই ব্যায়াম তিনটির কথা জোর দিয়ে বলেন। কারণ, এটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। নিয়মিত তিনি ব্যায়াম তিনটি করেন বলেই এখনও সতেজ, প্রাণবন্ত আর উজ্জ্বল হয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াতে পারছেন ।
এখন উল্লেখযোগ্য এই ব্যায়াম তিনটি সম্পর্কে একটু ধারণা দিলে আপনাদের কাছে সব পরিস্কার হয়ে যাবে। শারীরিক ব্যায়াম সম্পর্কে কম-বেশি প্রত্যেকেরই জানা আছে। কিন্তু মানসিক ব্যায়াম? মানসিক ব্যায়াম হচ্ছে আপনার কি ভালো লাগে (অবশ্যই শ্লীল ) তাই করবেন প্রতিদিন একটা সময়। যেমন গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, ধর্মগ্রন্থ পাঠ ইত্যাদি। নিজে করতে পারেন কিংবা মনোযোগ দিয়ে শুনতেও পারেন। এরপরে আধ্যাত্মিক ব্যায়াম। আধ্যাত্মিক ব্যায়াম হচ্ছে নামাজ, আহ্নিক কিংবা যার যে ধর্মে যে ইবাদত আছে তা তাকে প্রতিনিয়ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদায় করতেই হবে । সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, "আমার ব্যক্তিগত জীবনে আমি এই তিনটি মৌলিক কাজ কোনোদিন বাদ দিই না। আমি মনে করি, এই তিনটি ব্যায়াম যে প্রতিনিয়ত করবে তাকে কোনোদিন ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, প্রেসার কিংবা যে কোনো রোগ আক্রমন করতে পারবে না এবং এসব রোগের ঔষধ তাদেরকে স্যালুট করে পালাতেও বাধ্য থাকবে"। পাঠক, এজন্য বোধ হয় এখনও এই মহৎ ও ত্যাগী মানষটির কোনো রোগ নেই। সুতরাং ব্যক্তিগত জীবনে সুব্রত ভট্টাচার্য যে একজন অসাধারণ, অতুলনীয় ও সার্থক মানুষ তা সর্বজনস্বীকৃত ।
রেজাউল করিম রেজা
(লেখাটি চলবে, চোখ রাখুন)
আগের খবর বৃষ্টি পড়ে টাপুড় টুপুড় নদে এলো বান
পরবর্তী খবর বাবার জন্য ভালোবাসা