কমলাপুর রেল-স্টেশন ও রাজধানী নিয়ে কিছু ভাবনা
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৩ই জুলাই ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| বিকাল ০৪:২৯
দেশ
ই-বার্তা।। খুব ভোরবেলা পরিচিত একজনকে বিদায় দিতে কমলাপুর রেল-স্টেশনে যাই। গাড়ি থেকে নেমেই একটি দৃশ্যে চোখ আটকে যায়। প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশনের বাইরের দিক মিলিয়ে অসংখ্য মানুষ ঘুমিয়ে আছে সেখানে। বোঝা যাচ্ছে এরা এখানেই থাকে। কারো বিছানো আছে পাতলা ময়লা একটা কাঁথা, কারো বা তাও নেই। দিনভর এখানে সেখানে কাজ করে রাত হলেই ঘুমাতে আসে স্টেশনে। যদিও রেল স্টেশনের খুব পরিচিত একটি চিত্র এটি। তবুও কিছু সময়ের জন্য কোথা থেকে যেন একরাশ হতাশা এসে ঘিরে ধরে। এ তো মাত্র একটি জায়গার দৃশ্য। দেশে এরকম হাজার হাজার মানুষ পাওয়া যায় যারা গৃহহীন অবস্থায় শহরে অবস্থান করছে।
সামান্য কিছু বাড়তি রোজগারের জন্য অনেক মানুষ গ্রামের ভিটামাটি ছেড়ে ঢাকামুখী হয়। কিন্তু জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় তাঁরা জানতেও পারেনা যে কি অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য শহর নামক কঠিন বাস্তবতায়। কি এমন আছে যা আমাদের দেশের সহজ সরল মানুষগুলোকে এভাবে শহরমুখী করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এভাবে বলা যায়, এটা উন্নয়নের গাফিলতি৷ গ্রামে যদি সঠিকভাবে উন্নয়ন হয় আর সেইসাথে মানুষের কর্মসংস্থান হয় তাহলে মানুষ এভাবে শহরমুখী হতোনা। ঢাকায় একজন রিকশা চালকেরও আয় অনেক। তাঁদের কাছে কষ্টের আবাসহীন জীবন আয়ের বিবেচনায় সহনীয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ঢাকা শহরের ৪০ ভাগ মানুষ বস্তিতে বসবাস করেন। ঢাকায় বস্তির জায়গাও আর নাই। তাই ঢাকার পাশে কয়েকটি এলাকায় বস্তি সম্প্রসরাতি হচ্ছে আর সেই সাথে বাড়ছে রাস্তা ঘাটে, বাস টার্মিনালে, ওভার ব্রিজে ও রেল স্টেশনের মতো জায়গায় মানুষের থাকার প্রবণতা। কমলাপুরে চা খাওয়া রত এক বৃদ্ধকে প্রশ্ন করতেই তিনি সম্মতি জানালেন যে তিনিও এই স্টেশনেই রাত কাটান। থাকায় জায়গা খোঁজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সারাদিন তো বাইরে বাইরেই থাকি। খালি রাইত টা এইহানে ঘুমাই। থাকার জায়গার ভাড়া বেশি”।
ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ এখনো মনে করছে, গ্রামের থেকে শহরে কাজের সুযোগ বেশি। আর সেইসাথে বেশি উপার্জনের সুযোগও। গত তিন বছরে ঢাকায় এসেছে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এদের তিন চতুর্থাংশই থাকার কোন জায়গা পায়নি। তাই অবৈধ আবাসের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। নগর গবেষক এবং জনসখ্যা বিজ্ঞানীরা বলেন, ঢাকায় প্রতিবছর সাত লাখ নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে। এবং এদের শতকরা ৯০ ভাগই দরিদ্র। তারা নানা কারণে ঢাকামুখী হয় কাজের জন্য, আয়ের জন্য। তাঁরা মনে করছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ লোকসংখ্যা সাড়ে তিন কোটির বেশি হবার আভাস রয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যার তুলনায় শহুরে দরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৯১ থেকে ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে শহুরে দরিদ্রের সংখ্যা ৬০ লাখ থেকে বেড়ে ৮০ লাখ হয়েছে। আর একই সময়ে গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যা ৫ কোটি ৫০ লাখ থেকে কমে ৪ কোটি ৬০ লাখ হয়েছে।
শহুরে দারিদ্রতা আর সেই সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রিয় রাজধানীর পরিস্থিতি খারাপই বলতে হবে।
পরবর্তী খবর দেশের মহাসড়কের অচলাবস্থা