ক্লান্তি দূর করতে চাইলে
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৭শে জুলাই ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| বিকাল ০৩:২২
লাইফ
ই-বার্তা।। সোহাগ ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস তাঁর। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে বাড়ি ফেরা হয়। বলা যায় মোটামুটি আরামেই চাকুরী করেন তিনি। তবুও প্রতিদিন ৭/৮ ঘন্টা ঘুমিয়েও কিছুতেই সকালে ঘুম ভাঙতে চায়না। কাজ থাকার কারণে জোড় করে উঠে পড়লেও সারা দিন কেমন যেন ঝিমানি ভাব আর সেইসাথে কাজের প্রতি অনীহা থাকে। খাওয়া দাওয়াতেও অনিয়ম করেন না খুব একটা। এই একই মানুষ যখন গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান, তখন রাতের বেলা ভাই-বোন, বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে দিতে প্রায় ভোরে ঘুমাতে যান তিনি। কিন্তু মাত্র ৪/৫ ঘন্টা পরেই সকাল ৮টার মধ্যেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তাঁর। ঘুম ভেঙ্গেই খুব ঝরঝরে আর ফ্রেশ লাগে সোহাগের। এমনকি সারাদিনে একবারও ক্লান্তি তাঁকে স্পর্শ করে না। ঢাকায় ফিরে তিনি নিজেই ভেবে পান না, গ্রামে এত অল্প সময় বিশ্রাম নিয়েও কত চনমনে ছিলেন তিনি অথচ শহরে এসে পর্যাপ্ত ঘুমালেও শরীরে রাজ্যের ক্লান্তি। এর কারণ কি?
আসলে কারণ হোলো ঢাকার আবহাওয়া। বাতাসে অক্সিজেনের থেকে এখানে ধুলাবালি ও বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বেশি। যা আমাদের মস্তিক কে কাহিল করে দেয়। গ্রামগুলোতে এখনো সেইভাবে প্রযুক্তির কালো ধোঁয়া না পৌঁছানোর কারণে এখনো সুস্থ আছেন গ্রামে বসবাস করা মানুষগুলো। পর্যাপ্ত অক্সিজেন শরীর, মন, মস্তিস্ককে রাখে সুস্থ ও ঝরঝরে। এক কথায় শহরের বাতাস তো আর বিশুদ্ধ করা সম্ভব নয়, এছাড়া আর যেসব উপায়ে এই ঘুম ঘুম ও ক্লান্তি ভাব দূর করতে পারবেন চলুন জেনে নেই সেগুলো,
নিয়মিত ব্যয়াম করা
এনার্জি বা শক্তি খরচ হবে না ভেবে যদি ব্যয়াম না করেন তবে সেটা হবে ভুল। প্রতিটি সুস্থ মানুষ সপ্তাহে তিনদিন অন্তত বিশ মিনিট শরীরচর্চার অভ্যাস করলেই দেখবেন নিজেকে কতটা কর্মচঞ্চল লাগছে। প্রতিদিন ব্যয়াম করলে হৃদপিণ্ডের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে শরীরে কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সঠিকভাবে পৌঁছায়।
পর্যাপ্ত পানি পান করা
শরীরে শতকরা দুইভাগ পানি কমলেই মনে হবে শরীরে আর কোনও শক্তি নেই। পানি শূণ্যতার কারণে রক্তের পরিমাণ কমে যায়। ফলে রক্ত হয়ে যায় ঘন। এজন্য হৃদপিণ্ড রক্ত ভালোমতো পাম্প করতে পারে না। যার কারণে রক্ত চলাচল ধীরে হয়, শরীরের পেশী ও বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন ও পুষ্টি দেরিতে পৌঁছায় আর তখনই এনার্জি কমে যায়। এইজন্য প্রতিদিন ক্লান্তি দূর করতে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন।
আয়রনের অভাব
শরীরে আয়রনের অভাবেও ক্লান্ত লাগতে পারে। আয়রনের অভাবে পেশী ও কোষে প্রয়োজনের তুলনায় কম অক্সিজেন সরবরাহ হয়। তাই ক্লান্ত লাগে। অপর্যাপ্ত আয়রনের কারণে রক্তশূণ্যতা হয়। তাই এই পুষ্টিগুণ শরীরে পর্যাপ্ত রাখার জন্য চর্বি ছাড়া মাংস, ডিম, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, বাদাম খাওয়া উচিত।
কাজ নিখুঁত করার চেষ্টা
কাজ নিখুঁত করার চেষ্টায় খাটতে হয় বেশি, সময়ও লাগে বেশি। এমন একটা কাজ শুরু করা হলো, যা শেষ করা কঠিন বা অসম্ভব, তারপর দিন শেষে ক্লান্ত। কারণ কাজটি শেষ না হওয়ায় আত্মতৃপ্তি নেই। তাই যে কোনও কাজ শেষ করার জন্য সময় হিসাব করে নিন। নির্দিষ্ট সময়ের চাইতে বেশি সময় নিয়ে কোনও কাজ করলে কখনই ভালো হয় না। বরং শরীরে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভীড় করে।
নিজেকে তুচ্ছ না ভাবা
আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা, এই ধরনের রোগ মানুষকে মানসিকভাবে অবশ করে দেয়। ফলে সেই মানুষটা সবসময় ক্লান্ত অনুভব করে। দুশ্চিন্তা থেকে চাইলেই রেহাইও মেলেনা জানি, কিন্তু সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বাস্তবতা মেনে নিয়ে জীবন পার করা। এই দুশ্চিন্তাই সব কিছুর শেষ নয় এই বিশ্বাস রাখুন।
সকালে নাস্তা না করা
খাবার হচ্ছে শরীরের জ্বালানি। রাতে খাওয়ার পর যখন ঘুমাতে যাওয়া হয় তখনও শরীর এই জ্বালানি খরচ করে সারারাত রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখে। তাই সকালের নাস্তা হচ্ছে অনেকটা আবার জ্বালানি ভরার মতো বিষয়। ব্রেকফাস্ট না করলে সারাদিন ক্লান্ত লাগতেই পারে। তাই সকালে ভালোমতো খেয়ে নিতে হবে যা আপনার সারাদিনের ক্লান্তিভাব দূর করবে।
জাঙ্ক ফুড না খাওয়া
চিনিযুক্ত খাবার ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার শরীরে খুব দ্রুত শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এসব খাবার সবসময় খেলে রক্তে স্বাভাবিকের চাইতে চিনির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে শরীর ক্লান্ত করে দেয়। তাই যতটা পারা যায় জাঙ্ক ফুড কম খাবার অভ্যাস করুন।
নিজের কর্মক্ষেত্র গুছিয়ে রাখুন
যদি আপনার অফিসের টেবিল গোছানো না থাকে তবে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হবে। এতে মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে আপনাকে করে ফেলবে দুর্বল। তাই প্রতিদিন অফিস ছাড়ার আগে নিজের অফিসটেবিল গুছিয়ে রাখুন।
পরবর্তী খবর ওজন কমাতে হলে