গর্ভাবস্থায় কী খাবেন ও কতটা খাবেন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৯ই আগস্ট ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৩:৫৬ মেডিকেল

ই-বার্তা।। গর্ভবতী হওয়ার পরপরই যে প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে শুরু করে তার একটি হল গর্ভকালীন খাবার এর চিন্তা। বিশেষ এই শারীরিক অবস্থায় কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবে আর কোনটি যাবে না এমন নানা প্রশ্নে মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। তবে সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে গেলে যে পরিমাণ খাবার খাওয়া দরকার তা সব সময় খাওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে গর্ভাবস্থায় এমন খাবার বেছে নেওয়া জরুরি, যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনেরাল পাওয়া যায়। এতে করে পরিমাণে কম খেলেও পুষ্টির ঘাটতিতে কোনো কমতি হবে না।

চলুন এখন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় একজন নারীর কী কী পুষ্টির প্রয়োজন এবং তা ঠিক কতটা পরিমাপে।

ভিটামিন-
বি-১ ও বি-২
ভিটামিন-বি ডায়জেস্টিভ সিস্টেমকে চালু রাখে। ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চামড়ার শুষ্কভাব কমিয়ে সতেজ রাখে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পেট, কোমর, গলা এসব জায়গার চামড়ার রং পরিবর্তন হয়, পেটের চামড়া স্ফিত হওয়ায় টান লাগে। ভিটামিন-বি এই সময় চামড়ার দেখভালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রেড মিট, কলিজা, ডিম, কলা, কিডনি, বিনস, পালংশাক, কাঠবাদাম ও দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।

ভিটামিন-সি
আয়রন শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন-সি প্রয়োজন। এ জন্য ডাক্তার বা পুষ্টিবিদেরা আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরপরই লেবু, কমলা, বাতাবিলেবু বা আমলকী খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় পাওয়া যাচ্ছে ভ্রূণের মানসিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন-সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন-সি ফলিক অ্যাসিডকে কার্যকর করে তোলার চালিকাশক্তি। গর্ভের শিশুর মাংসপেশি ও হাড় গঠনের কোলাজেন প্রোটিনের প্রয়োজন। ভিটামিন-সি কোলাজেন তৈরিতেও সাহায্য করে।

ভিটামিন-ডি
ভিটামিন-ডি মায়ের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের সুষম ব্যালেন্স শিশুর হাড় ও দাঁত তৈরিতে সাহায্য করে। সে কারণে গর্ভবতী অবস্থায় ডিম, দুধ, পনির, দই ও ছোট মাছ খাওয়া বেশি পরিমাণে খুবই দরকার।

প্রোটিন-
গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় প্রায় দেড়গুণ। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যেন অতিরিক্ত ১৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় আপনার খাদ্যতালিকায় যেসব খাবার ছিল, তার সঙ্গে অতিরিক্ত একটি ডিম, এক বাটি ডাল বা শিমের দানা অথবা এক মুঠো বাদাম রাখলে তা আপনার প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে।

ক্যালসিয়াম-
স্বাভাবিক অবস্থায় যতটুকু ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন, গর্ভাবস্থায় এর প্রয়োজন বেড়ে যায় প্রায় ২০০ মি.গ্রা.। গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি, নিজের শরীরের দেখভাল এবং বুকের দুধ তৈরিতে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। দুধ, দই, পনির থেকেই এই অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করা যায়। বাটা মাছ, রুই মাছ ইত্যাদিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। তবে বেশিরভাগ শুঁটকি মাছ, বিশেষ করে চিংড়ি মাছের শুঁটকিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ এতটাই বেশি যে সামান্য পরিমাণে খেলেও এটি গর্ভাবস্থায় দৈনিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

আয়রন-
জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু কেবল মায়ের দুধ খায় এবং মায়ের দুধে আয়রন থাকে না, ফলে এই ৬ মাস সময়কালের প্রয়োজনীয় আয়রন শিশু নিজের শরীরে জমা করে রাখে তার জন্মের আগেই। আর গর্ভের শিশু তার আয়রন পেয়ে থাকে মায়ের শরীর থেকে। তাই মায়ের শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি হয় তখন শিশু আর জমা রাখার মতো আয়রন পায় না। যার ফলে জন্মের পরপরই সে রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হয়। এ জন্য গর্ভাবস্থায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অনেক জরুরী। আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস হোলো রেড মিট। এ ছাড়া কচু ও শুঁটকি মাছ থেকেও প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। সবজির মধ্যে ফুলকপি খেলেও আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়।

ফলিক অ্যাসিড-
স্বাভাবিক অবস্থার থেকে দ্বিগুণ পরিমাণের ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজন গর্ভবতী অবস্থায়। ফলিক অ্যাসিড খুব বেশি পরিমাণ পাওয়া যায় ব্রোকলি, ডাল ও পালংশাকে। এ ছাড়া বাঁধাকপি, ফুলকপি, কমলা, মটরশুঁটি ও হোলগ্রেন রুটিতেই ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ ভালো।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ