ঢাকায় বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। কারণ-


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৯শে আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার  | দুপুর ০২:০৯ দেশ

ই-বার্তা।। বাংলাদেশে বিয়ের অনুষ্ঠান খুবই ধুমধাম করে হয়। কিন্তু অন্যান্য দেশের মতো এদেশে বিয়ের সম্পর্ক ঠুনকো কারণে বিচ্ছেদে পরিণত হওয়াকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়া হয়না। মেনেও নেয়া যায়না সহজে। এমনকি তৃতীয় পক্ষের সাহায্য অনেক সম্পর্ক শেষ মুহুর্তে আবার জোড়া লেগে যায়। কিন্তু দিনে দিনে পাশ্চাত্ত্য কালচারের ছোঁয়া ঘিরে ধরছে আমাদের দেশীয় কালচারকে। বিশেষ করে রাজধানীতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার চোখে পড়ার মতো বেড়ে গেছে।

গত ৬ বছরে শুধু রাজধানীতে ডিভোর্স হয়েছে ৩০,৮৫৫ টি। নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে প্রায় ৫০ হাজার আবেদন। এর মধ্যে স্ত্রীরা ডিভোর্স দিয়েছেন ৬৭ শতাংশ এবং স্বামীরা ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ স্ত্রীরা দ্বিগুণসংখ্যক হারে বিচ্ছেদের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। যা সত্যি অবাক করা।

একসাথে থাকতে হলে ঠোকাঠুকি হবেই। শতভাগ মসৃন সম্পর্ক পৃথিবীর খুব কম দম্পতির মধ্যেই আছে। এই ছোটখাট ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে হবে নিজেদেরকেই। নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং সাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে যেন আপনার জীবনসঙ্গীকে পিছনে না ঠেলে দেয় সেদিকে সজাক দৃষ্টি রাখতে হবে। তথাকথিত "ইগো" এখনকার বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ।

রাজধানীর এই বিপূল সংখ্যক ডিভোর্সের মূল কারণ হিসেবে দেখা যায়, বনিবনা না হওয়া, সন্দেহ প্রবণতা, নির্যাতন, পরকীয়া, মাদকাসক্তি, কোন ধরনের শারীরিক অক্ষমতা, ওয়াদা ভংগ করা ইত্যাদি। আরো কারণ হিসেবে উঠে এসেছে স্মার্টফোন বা অনলাইনের অপব্যবহার, অনৈতিক অর্থ উপার্জন, অতিরিক্ত চাহিদা, বিদেশী অপসংস্কৃতি আর মূল্যবোধ এর অভাব, সংগীকে পর্যাপ্ত সময় না দেয়া, একাকীত্ব, আত্মতুষ্টি না থাকা ইত্যাদি। নিস্পত্তি হওয়া ডিভোর্স এর প্রায় ৮৭ শতাংশ এর জন্য পরকীয়া দায়ী। কারণগুলো মোটেও কোন বড় ইস্যু নয় যদি না আপনি এবং আপনার সংগী কিছুটা সময় বের করে নিজেকে নিয়ে না


ভেবে নিজেদেরকে নিয়ে ভাবেন।

বিয়ের পরে সারাক্ষণ শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবা নয়, বরং আপনার সাথে যার জীবন জড়িয়ে গেছে তাকে সহ নিজেকে নিয়ে ভাবুন, তাহলেই দেখবেন সময় না দেয়া, একাকীত্ব, সন্দেহ, পরকীয়ায় জড়ানোর মতো ঘটনা গুলো আর ঘটবেনা। একজন আরেকজনকে বোঝা খুবই জরুরী। সেক্ষেত্রে সময় তো দিতেই হবে। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের বদলে দুই কাপ চা বা কফি নিয়ে দুজনে মিলে প্রতিদিন এক ঘন্টা শুধু নিজেদেরকে নিয়ে কথা বলুন। নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন। সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একদিন কাছেই কোথাও বেড়াতে যান। যতটা সময় বাইরে কাটাবেন চেষ্টা করুন মোবাইল ফোন বা অনলাইন থেকে দূরে থাকতে। একজন কোনকারণে রাগ করলে অন্যজনকে শান্ত থাকতে হবে। এভাবেই সব সমস্যার সমাধান হবে। ভরসা রাখুন একে অন্যের উপর। আপনার ভরসা শক্তিশালী হলে আপনার সংগী সেই ভরসা নষ্ট করার আগে বারবার চিন্তা করবে।

দুইজন বিবাহিত নর নারীর পরকীয়ার কারণে দুটো সংসার ভেংগে যায়। দুই পরিবারের সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়। তবে একেবারেই বনিবনা না হলে বা মন না চাইলে সংসার না করাই ভালো। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মন কে বারবার প্রশ্ন করুন যে আসলে আপনি কি চান। উত্তর যদি প্রতিবার একই আসে তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিন সংগীকে। তবে তা শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন, রগারাগি করে নয়। হয়তো আপনাদের মধ্যে আলোচনা হলে আবার একে অন্যের প্রতি সেই পুরোনো ভালোবাসা দেখা দিবে। আর মন না মানলে নতুন করে বৈধ সম্পর্ক, নতুন জীবন শুরু করুন। তবুও সংগীকে ধোকা দেয়া নয়।

সব কিছুর পরেও কিছুটা মেনে নিয়ে ও কিছুটা মানিয়ে নিয়ে একে অন্যের পাশে থাকাই সর্বোত্তম।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ