ই-বার্তা ।। ক্যান্সার কোষ বা মরণ কোষ শরীরে বাসা বাঁধার কারণ অনেক। এর মধ্যে জিনগত সমস্যা, জীবনযাপন, ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, কিছু নির্দিষ্ট সংক্রমণ, বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের কারণে হওয়া বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা ইত্যাদি অন্যতম। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান বর্জন করা ছাড়াও আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা উচিত। যেমন- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, পুষ্টিকর খাবার, বিশেষত উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার খাওয়া ইত্যাদি। অনিয়ন্ত্রিত ও ভূল খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে একজন ব্যক্তির ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। “ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড” এর মতে, আমেরিকাতে ২০ শতাংশ ক্যান্সার রোগীরই রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মেদ, অতিরিক্ত মদ্যপান ও অপুষ্টি। তবে সবগুলো কারণই মোকাবেলা করা সম্ভব যদি খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দেয়া যায় ক্যান্সারের জন্য দায়ী বিশেষ কিছু খাবার।

১। প্রক্রিয়াজাত ও কৃত্রিম চিনি-
শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত চিনি ক্যান্সার কোষের প্রিয় খাবারগুলো মধ্যে অন্যতম। এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। উচ্চ মাত্রায় ফ্রুক্টোজ যুক্ত চিনির উপর ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নির্ভরশীল। তাই প্রক্রিয়াজাত কিংবা কৃত্রিম চিনির পরিবর্তে মধু, গুড়, ম্যাপল সিরাপ ইত্যাদি ব্যবহার করুন।

২। প্রক্রিয়াজাত মাংস-
প্রক্রিয়াজাত মাংস অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় প্রায় ৬৭ শতাংশ। এতে থাকে উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ও থাকে নাইট্রেইট, যা এর স্বাদ বাড়ায়। স্মোকড মিট বা কাঠের ধোঁয়ার প্রস্তুতকৃত মাংস খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য সুবিধার নয়, কারণ এই ধরনের খাবার তৈরির সময় মাংস, টার অর্থাৎ ধোঁয়া থেকে সৃষ্টি বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে নেয়।
তাই খেতে হবে চর্বিহীন মাংস অথবা মাংস ঘরেই রাঁধতে হবে।

৩। চাষ করা মাছ-
বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মাছ যেমন স্যামন, অত্যন্ত জনাকীর্ণ পরিবেশে বড় হয়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবির আক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যবহার হয় বিভিন্ন জীবণুরোধকারী ওষুধ, কীটনাষক ও অন্যান্য ‘কারসিনোগেনিক’ রাসায়নিক উপাদান। প্রাকৃতিক মাছের তুলনায় চাষ করা মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও কম থাকে।
তাই যতটা সম্ভব নদী বা সমুদ্রের মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

৪। আচার ও ধোঁয়ার প্রস্তুতকৃত খাবার-
এসব খাবারে সাধারণত খাদ্য সংরক্ষক উপাদান যেমন, নাইট্রেইট থাকে। দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে ওই খাদ্য সংরক্ষক উপাদানগুলো শরীরে জমা হতে থাকে। ফলে একসময় এই বিষাক্ত উপাদানগুলো কোষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং ক্রমেই ক্যান্সারের দিকে এগিয়ে যায়। তাই এ ধরনের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

৫। হাইড্রোজেনেইটেড অয়েল বা ট্রান্স-ফ্যাট-
মানুষের তৈরি এই উপাদান রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত করা হয়। আবার এর গন্ধ ঢাকতে ও স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক পদার্থ।
এগুলো স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ।

৬। আলুর চিপস-
হাইড্রোজেনেইটেড ভেজিটেবল অয়েলে ভেজে তৈরি করা হয় এই চিপস, সঙ্গে থাকে অতিরিক্ত লবণ। প্রতিদিন মাত্র ১ আউন্স চিপস খেলেই বছরে গড়ে প্রায় দুই পাউন্ড ওজন বাড়তে পারে। পাশাপাশি এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স-ফ্যাটও থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। আর লবণে থাকা সোডিয়াম বাড়ায় রক্তচাপ। আলুর চিপসকে মচমচে বানানোর জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হয়। এতে অ্যাক্রিলামাইড নামক কারসিনোজেন ধরনের বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়। যা সাধারণত সিগারেটে মেলে। এজন্য দোকান থেকে চিপস কেনার পরিবর্তে ঘরেই চিপস বানিয়ে খাওয়া অভ্যাস করতে হবে।

৭। মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন-
খাওয়া সহজ এবং তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর একটি স্ন্যাকস পপকর্ন। তবে, ঝামেলা হল এর প্যাকেটে। বেশিরভাগ মাইক্রোওয়েভ পপকর্নের প্যাকেটের গায়ে থাকে পারফ্লুরোঅক্টানোইক অ্যাসিড নামক রাসায়নিক উপাদান। যা স্তন, বৃক্ক, মুত্রথলি, কোলোরেক্টাল, প্রোস্টেট, ফুসফুস, থাইরয়েড, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৮। পরিশোধিত সাদা আটা-
আটা পরিশোধনের সময় এর প্রায় সকল পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। পরে একে ক্লোরিন গ্যাসের সাহায্যে ব্লিচ করা হয় ক্রেতার চোখে আকর্ষণীয় করার জন্য। এই আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রাও অনেক বেশি। অর্থাৎ শরীরে পুষ্টি সরবরাহ ছাড়াই ইনসুলিনের মাত্রা হুট করে বাড়িয়ে দিতে পারে।
তাই পরিশোধিত সাদা আটার পরিবর্তে গম, কাঠবাদাম বা বার্লির আটা খাওয়া ভালো।