পবিত্র আশুরার ইতিহাস ও ফজিলত
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১লা অক্টোবর ২০১৭, রবিবার
| দুপুর ০১:০৯
১
ই-বার্তা।। আরবি শাহরুন শব্দের অর্থ হোলো মাস, আর মুহাররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। সুতরাং শাহরুল মুহাররম এর অর্থ হলো সম্মানিত মাস। আরবি মুহাররম থেকেই মহররম শব্দটি বাংলা সাহিত্যে এসেছে। মহররম হলো হিজরি সনের প্রথম মাস। যা আল্লাহ তায়ালার নিকট সম্মানিত চার মাসের এক মাস। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২, যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না"। (সুরা তাওবা: ৩৬)
আজ মহররম মাসের দশ তারিখ। ইসলাম ধর্মে এই দিনকে বলা হয় আশুরা। আরবি আশারা শব্দ থেকে এটি এসেছে যার অর্থ হোলো দশ। তাই এ মাসের দশ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলে অবহিত করা হয়। আদিকাল থেকেই যুগে যুগে আশুরার এই দিবসে বহু স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা আমরা পবিত্র কোরঅান ও হাদিস শরীফ থেকে জানতে পারি। হাদিসে এসেছে, মহান আল্লাহ যেদিন আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, জান্নাত-জাহান্নাম, লাউহু মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্টিজীবের আত্মা সৃজন করেছেন, সে দিনটি ছিল আজকের এই পবিত্র আশুরার দিন। আবার এ দিনেরই কোনো এক জুমাবারে হযরত ইস্রাফিল অা. এর ফুঁৎকারে নেমে আসবে মহা প্রলয়। পবিত্র কোরঅানের ভাষায় যাকে বলা হয় কেয়ামত।
এছাড়াও ইসলামের অারো অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে এ অাশুরাতেই। যেমন, আদি পিতা হযরত আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয় এ দিনে, এ দিনেই হযরত আদম আ. কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় অাবার ভুলের কারণে তাদেরকে পৃথিবীতে প্রেরণের পর এ দিনই তাঁর তাওবা কবুল করা হয়। এমনিভাবে এ দিনে জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. জন্মগ্রহণ করেন, আবার এদিনেই নমরুদের বিশাল অগ্নিকুন্ড হতে মুক্তিলাভ করেন। এই আশুরাতেই তুর পাহাড়ে আল্লাহর সাথে হযরত মুসা আ. কথোপকথন ও আসমানী কিতাব তাওরাত লাভ করেন, অাবার এই ১০ই মহররমেই জালেম ফেরাউন দলবলসহ নীল দরিয়ায় সলিল সমাধি হয়। তদ্রূপ, হযরত নুহ আ. ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মহাপ্লাবন হতে মুক্তি লাভ, মাছের পেট হতে হযরত ইউনুস আ. এর পরিত্রাণ, আসমান হতে বৃষ্টি বর্ষণের সূচনা এ সব কিছুই সংঘটিত হয়েছে ১০ই মহররম অর্থাৎ আশুরার দিনে। মোট কথা এই ১০ই মহররম যেন ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী। তাই শরিয়তের দৃষ্টিতে এ দিনটির রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য। মহররম মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরীফে বহু বর্ণনা লিপিবদ্ধ রয়েছে। অার এসব ফজিলতের আলোকে মুসলিম উম্মাহর জন্য এ মাসের সুনির্দিষ্ট আমল হলো আশুরার সিয়াম বা রোজা।
হযরত আলী রা. কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, রমযানের পর আর কোনো মাস আছে কী, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূল সা. এর নিকটও জনৈক সাহাবী করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূল সা. বললেন, "রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তাওবা কবুল করবেন"। (জামে তিরমিযী, ১১৫৭)
মহররম মাসের রোজা সম্পর্কে অনেক বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তদুপরি নিম্নে কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করা হল। হাদিস থেকে জানা যায়, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজাই উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর ফরজ ছিল। পরবর্তী সময়ে ওই বিধান রহিত হয়ে তা নফলে পরিণত হয়। হাদিসটি হলো,
“রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহররমের আশুরার রোজা।” (সুনানে কুবরা, ৪২১০)
হযরত জাবের রা. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, "রাসূল সা. আমাদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না"। (মুসলিম,১১২৮)
মুসলিম শরিফের এক হাদিসে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সা. যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সা., ইহুদি- নাসারারাওতো এই দিনটিকে বড়দিন মনে করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি, তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সা.বললেন, "তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা এই ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব"। (মুসলিম-১১৩৪)
ইমাম শাফেয়ী ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কারণ রাসূল সা. দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন। এছাড়া রাসুল সা. কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়"। (মুসলিম-১১৬২)
আগের খবর ক্যাসপারকে মনে পড়ে
পরবর্তী খবর “আমেনা থেকে এভ্রিল এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি”