দীপাবলির ইতিহাস
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৯শে অক্টোবর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| দুপুর ০২:০৪
দেশ
ই-বার্তা।। পুরাণের কাল। রামায়ণী যুগ। ১৪টা বছর অযোধ্যানাথের কাটল বনবাসে। বধ করলেন মহাবলী রাবণকে। এবার তিনি ফিরবেন লঙ্কা নগরী থেকে অযোধ্যা নগরীতে।
সেই অযোধ্যায় প্রজাগণের প্রিয় রাজা বেদজ্ঞ দূরদর্শী মহাতেজা দশরথ রাজত্ব করতেন। সেখানকার লোকেরা আনন্দিত, ধর্মপরায়ণ, শাস্ত্রজ্ঞ, নিজ নিজ সম্পত্তিতে তুষ্ট, নির্লোভ ও সত্যবাদী ছিল। অযোধ্যায় কামাসক্ত, নীচপ্রকৃতি বা নৃশংস পুরুষ অথবা অবিদ্বান বা নাস্তিক দেখা যেত না। এমন লোক ছিল না যে কুণ্ডল মুকুট ও মালা ধারণ করে না, যার দেহ অপরিষ্কৃত, যে চন্দনাদি লেপন করে না, যার অঙ্গ সুবাসিত নয় এবং যার ভোগের অভাব আছে। সেখানে নাস্তিক, মিথ্যাবাদী, অল্প শাস্ত্রজ্ঞ, অবিদ্বান অসূয়া পরবশ বা অসমর্থ কেউ ছিল না। পর্বতকন্দরে যেমন সিংহ থাকে সেইরূপ অযোধ্যায় অগ্নিতুল্য তেজস্বী চতুর অসহিষ্ণু ধনুর্বিদ্যায় শিক্ষিত যোদ্ধাগণ বাস করতেন।
এমন অযোধ্যা নগরী চোদ্দটা বছর নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়েছিল রঘুকুলপ্রদীপ শ্রীরামচন্দ্র ছাড়া। অযোধ্যার কুলতিলক ফিরছেন, এই আনন্দ সংবাদে সম্পূর্ণ নগরী দীপমালায় সুসজ্জিত করে তুললেন অযোধ্যাবাসী। তাঁরা গা ভাসিয়ে দিলেন আনন্দলহরিতে। উৎসব মুখরিত অযোধ্যায় শ্রীরামচন্দ্র ফিরেছিলেন জনককন্যা জানকী ও অনুজ লক্ষ্মণকে নিয়ে। প্রজারা শ্রীরামচন্দ্র ও সীতাদেবীকে সম্মান ও অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন আলোকউৎসবের এই দিনটিতে। সেই দিনটি থেকে শুরু হল আনন্দময় দীপাবলি উৎসব।
যখন ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের প্রাদুর্ভাব হয় তখনই ভগবান অবতীর্ণ হন পৃথিবীতে। দৈত্যরাজ বলি ছিলেন প্রহ্লাদের পৌত্র। তিনি অমিত শক্তির অধিকারী হয়ে দেবলোক থেকে দেবতাদের নির্বাসিত করলে দেবগণ শরণাপন্ন হন ভগবান বিষ্ণুর। তিনি বলিকে দমন করে দেবতাদের উদ্ধার করার জন্য বামনরূপে মর্ত্যে জন্মগ্রহণ করেন কশ্যপমুনির ঔরসে তাঁর স্ত্রী অদিতির গর্ভে। পুরাণের কালে ভগবান বিষ্ণু বামন অবতার রূপ ধারণ করেছিলেন দীপাবলির পুণ্যদিনে।
দীপাবলির দিন ধনসম্পদ ও অর্থের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মহালক্ষ্মী উঠে আসেন সমুদ্রমন্থনের সময়।
এদিন প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো করা হয় মহালক্ষ্মীকে। এই দেবীর সঙ্গে দুর্গানন্দন গনপতিজি, ধনাধিপতি কুবের আর দেবী সরস্বতীর পুজো করলে তাঁদের অপার করুণালাভে বঞ্চিত হয়না ভক্ত ও উপাসকেরা। পুরাণের কথায়, দিনটি মহালক্ষ্মীর জন্মদিন বলে অভিহিত।
দীপাবলির দিনটি শিখ সম্প্রদায়ের কাছে একটি অবিস্মরণীয় দিন। অমৃতসরে স্বর্ণমন্দিরের ভিত্তিস্থাপন করা হয়েছিল ১৫৮৮ সালে দীপাবলির পুণ্য ও পবিত্র দিনে। গুরু হরগোবিন্দ ছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের ষষ্ঠগুরু। তিনি স্বেচ্ছায় সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে বন্দি ছিলেন গোয়ালিয়র দুর্গে। একবছর পর যখন সম্রাট তাঁর মুক্তির আদেশ দেন, গুরু হরগোবিন্দ বেঁকে বসেন। তাঁর দাবি তাঁর সঙ্গে বন্দি হিন্দু রাজাদেরও মুক্তি দিতে হবে। শেষ অবধি জাহাঙ্গীর ৫২ জন হিন্দুরাজাকে গুরু হরগোবিন্দের সঙ্গে মুক্তি দেন। শিখরা দীপাবলির দিনটিকে “বন্দি ছোড় দিবস” হিসাবে পালন করেন। গুরু হরগোবিন্দের সময় থেকে আজও এই উৎসব পালন করা হয় অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরকে আলোয় আলোকিত করে, প্রদীপ জ্বালিয়ে।
দীপাবলী সনাতনধর্মীদের উৎসব বিশেষ। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। ঈশ্বরীয় আবেশে ভরা দীপান্বিতা। এ নামের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস ও পুরাণের অভিবন্দনা। উচ্ছ্বাস নেই, আছে হৃদয় থেকে উৎসারিত অফুরন্ত আনন্দের প্রজ্বলিত আলোকমালা। মহালয়ায় শ্রাদ্ধ গ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্ত্যে আগমন করেন বলে, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে ঐ দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোতবাতি জ্বালায়। কেউ কেউ বা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায়, একে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় আকাশ প্রদীপ। দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। প্রতি বিজয়ার ভাসানে- পাঁচদিনের আনন্দ-বিদায়ে অবচেতনে হলেও যে বিয়োগ-বিধূর চেতনায় আবিষ্ট হয় মন, সেই মন দীপাবলিকে সামনে রেখেই আবার আনন্দের স্বপ্ন দেখে।
আগের খবর বয়স হলেই সমাজবিচ্ছিন্ন নয়
পরবর্তী খবর এই মেঘলা দিনে একলা ...