শেভরন ছাড়ছে না বাংলাদেশ, পুরনো প্রস্তাবে রাজি সরকার
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৭শে অক্টোবর ২০১৭, শুক্রবার
| দুপুর ০১:৪০
অন্যান্য
ই-বার্তা ।। মার্কিন বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ছাড়ছে না। বছর খানেক ধরে আলোচনায় অবশেষে কোম্পানিটি বাংলাদেশে অবস্থিত তার গ্যাসক্ষেত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। শেভরনকে বাংলাদেশে রাখতে তাদের একটি ‘পুরনো প্রস্তাবে’ রাজি হতে হচ্ছে সরকারকে। প্রস্তাবটি হলো, বিবিয়ানায় একটি গ্যাস কম্প্রেসার স্থাপন।
বিদ্যুৎ ভবনে একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, শেভরন বাংলাদেশ ছাড়ছে না। তারা বিবিয়ানায় আরও ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগ করা হবে কম্প্রেসার বসানোর জন্য।
শেভরন তিন বছর আগেই কম্প্রেসার স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন সরকার রাজি না হলেও এখন তাতে সায় দিচ্ছে।
বিবিয়ানায় গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য একটি কম্প্রেসার স্থাপনে ২০১৪ সালের দিকে পেট্রোবাংলায় প্রস্তাব দিয়েছিল শেভরন। একই সঙ্গে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল মার্কিন কোম্পানিটি। কিন্তু ওই ক্ষেত্রে গ্যাসের যে চাপ রয়েছে, তাতে এই কম্প্রেসার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সে সময় শেভরনের প্রস্তাবে রাজি হয়নি পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুসারে শেভরন যে অর্থ বিনিয়োগ করবে, তা গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে উসুল করবে। তাই তাদের বাড়তি বিনিয়োগের প্রস্তাবে রাজি হয়নি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) অনুসারে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে সে সময় শেভরনকে জানানো হয়।
এরপর গত বছর হঠাৎ কোম্পানিটি তার বাংলাদেশের তিন গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ বিক্রির ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে তারা হিমালয়া নামের চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করে। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে শেভরন সরকারের পূর্বানুমতি নেয়নি। এ ছাড়া সরকার নিজেও গ্যাসক্ষেত্র কেনার বিষয়ে আগ্রহী ছিল। এজন্য তারা মার্কিন কোম্পানি উড ম্যাকেঞ্জিকে দিয়ে শেভরনের সম্পদের ওপর জরিপও পরিচালনা করে। কিন্তু শেভরন পেট্রোবাংলার অনুমতি ছাড়া চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করায় তাদের সম্পদ হস্তান্তরের বিষয়টি সরকার আটকে দেয়। এরপর শেভরন কর্তৃপক্ষ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার শুরু করে। ৮ অক্টোবর কোম্পানিটির একটি ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি দল পেট্রোবাংলার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় তারা কম্প্রেসার স্থাপন ও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নতুন করে উত্থাপন করে। শেভরন বিবিয়ানায় ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগে কম্প্রেসার স্থাপন ও প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘনফুট) গ্যাসের দাম দুই দশমিক ৭৬ ডলার থেকে বাড়িয়ে তিন ডলার করার প্রস্তাব দেয়।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, শেভরন নতুন করে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই অর্থে তারা কম্প্রেসার স্থাপন করবে।
কেন কম্প্রেসার স্থাপন করবে জানতে চাইলে বলেন, সেখানে গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। গ্যাসের চাপ কমে যাবে জানলে কেন কয়েক বছর আগে ৫০ কোটি ডলার খরচ করে শেভরনকে নতুন কূপ খননের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কী করা হয়েছিল জানা নেই। তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটা পেট্রোবাংলা পর্যবেক্ষণ করবে। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান। তবে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, শেভরন হিমালয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তাদের জানিয়েছে।