ইতিহাসে স্থান নেয়া ৩ ভিন্নরকম চোরের গল্প
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৪ঠা নভেম্বর ২০১৭, শনিবার
| দুপুর ০২:৩৩
আন্তর্জাতিক
ই-বার্তা।। চোর এবং চুরি দুটো বিষয় নিয়েই আমাদের চিন্তার শেষ নেই। তবে এমনও কিছু চর আছেন যারা তাদের চুরি বিদ্যা দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে চনিয়েছেন। কুখ্যাত এমন ৩ চোরের গল্পই জানানো হবে আজকের এ লেখায়।
স্টিফেন ব্লুমবার্গ
বইপোকা শব্দটির সাথে কমবেশি আমরা অনেকেই পরিচিত। এ শ্রেণীর মানুষেরা যেমন নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস বজায় রাখেন, তেমনি একটি বই পড়া শুরু করলে একেবারে সেই বইয়ের কাহিনীর ভেতরেই যেন তারা ঢুকে যান। ভালো কোনো লেখকের নতুন কোনো বই বাজারে আসামাত্র তা তাদের সংগ্রহ করা চাই ই চাই।
তবে সেই বইপোকাদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন স্টিফেন ব্লুমবার্গ। একজন মানুষের বই সংগ্রহের নেশা কোন পর্যায়ে পৌঁছুতে পারে, তার এক উৎকৃষ্ট কিংবা নিকৃষ্ট নমুনা বলা যায় এ মানুষটিকে।১৯৯০ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। তার অপরাধ? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইব্রেরি থেকে বই চুরি করা! যে পরিমাণ বই তিনি চুরি করেছিলেন সেগুলোর মোট দাম ৫৩ লক্ষ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এ ঘটনার পর সবাই তাকে বই দস্যু হিসেবে চিনতে শুরু করে। ধারণা করা হয়, বিশ্বের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি বই চুরি করেছেন।
যে সব বই তিনি চুরি করেছিলেন সেসব বই বিক্রির বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও তার ছিলো না। তবুও, বিচারে ব্লুমবার্গ দোষী সাব্যস্ত হন, সাড়ে চার বছরের জেল হয়েছিলো তার। জেল থেকে বেরিয়ে অবশ্য আবারও বই চুরিতেই মেতে উঠেছিলেন তিনি।
জোনাথন ওয়াইল্ড
আঠারো শতকে লন্ডনের অন্যতম সুপরিচিত এক ব্যক্তি ছিলেন জোনাথন ওয়াইল্ড, লোকে যাকে চিনতো থিফ টেকার জেনারেল হিসেবে। তৎকালে লন্ডনে বিচিত্র এক নিয়ম প্রচলিত ছিলো। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো চোরকে ধরিয়ে দিতে পুলিশকে সহায়তা করতো, তাহলে চুরি যাওয়া অর্থের অর্ধেক পরিমাণ পুরষ্কার হিসেবে পেত সেই লোকটি। সমাজে চুরি কমাতে এর বাসিন্দাদের সক্রিয় করে তুলতে পদ্ধতিটি চমৎকার ছিলো।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো একে ঘিরেও। কারণ বেশ কিছু অতি বুদ্ধিমান মানুষ এটাকেই ব্যবসা বানিয়ে নিলো, যাদের বলা হতো থিফ টেকার। এজন্য তারা হয়তো কোনো ডাকাতদলকে ভাড়া করে প্রথমে কোনো অপরাধে লিপ্ত করাতো। এরপর চুরি হয়ে গেলে তারা মালামাল সহ সেই ডাকাতদলকে আবার পুলিশের হাতেই তুলে দিত! ফলে পুরষ্কারটা তার ভাগ্যেই জুটতো।
একবার দেনার দায়ে জেলে যেতে হয়েছিলো জোনাথন ওয়াইল্ডকে। সেখানে গিয়েই অন্ধকার জগতের নানা শ্রেণীর মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে তার। জেল থেকে বেরোনোর পর এদের সাথেই সখ্যতা গড়ে উঠেছিল ওয়াইল্ডের। তাদেরকে নিয়ে সংঘবদ্ধ এক অপরাধী দল গড়ে তোলে সে। চুরি যাওয়া মাল ওয়াইল্ডের গুদামে সংরক্ষণ করা হত। এবং যাদের মাল চুরি জেত তারা এসে ওয়াইল্ডের কাছে নালিশ করত। ওয়াইল্ড তখন খুব সতর্কতার সাথে বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করত। এবং চোরদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করত। এভাবে প্রাপ্ত পুরষ্কারের টাকা তারা ভাগাভাগি করে নিত। পরবর্তীতে পুলিশ আইন করে এই পুরষ্কার দেয়ার নিয়ম বন্ধ করে। অবশ্য বারবার অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে কাজ সেরে ফেলায় ওয়াইল্ডকে হাতেনাতে ধরতে পারছিলো না পুলিশ। শেষপর্যন্ত জেক শেফার্ড নামক এক চোর কে ধরিয়ে দেবার পর তার সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। এর কিছু দিন পরেই ধরা পরে ওয়াইল্ড। পরবর্তীতে তার ফাঁসি হয়।
জিয়ান্নি ডি ভ্যালোইস-সেইন্ট-রেমি
জিয়ান্নি ডি ভ্যালোইস-সেইন্ট-রেমি সবসময়ই চাইতেন বিত্তবৈভবের প্রাচুর্যে তার জীবনটা ভরে উঠুক। তবুও অভাব কেন যেন তার পিছু ছাড়ছিলো না। আর এ নিয়ে তার হাপিত্যেশেরও কোনো অন্ত ছিলো না। একসময় বিয়ে হলো জিয়ান্নির। তিনি ভেবেছিলেন, বিয়ের পর হয়তো অর্থের জন্য দীর্ঘদিনের হাহাকার কাটবে তার। কিন্তু না, তখনও কাঙ্ক্ষিত সচ্ছলতা ধরা দিলো না তার জীবনে।
জিয়ান্নি জানতেন রানি মেরি এন্টোইটের সাথে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না কার্ডিনাল ডি রোহানের। এ সুযোগটাকেই কাজে লাগালেন তিনি, প্রেমের ফাঁদে ফেললেন রোহানকে। সম্পর্কের একপর্যায়ে জিয়ান্নি জানালেন, মেরির সাথে তার কথা হয়েছে। কিছু কাজ করলে রোহান আবারও মেরির মন জয় করতে পারবেন।
রোহানের ধারণা পাকাপোক্ত করতে তিনি রানীর নাম দিয়ে বেশ কিছু চিঠি জালিয়াতি করেছিলেন। এমনকি একবার মেরির মতো দেখতে এক পতিতাকেও সাজিয়ে এনেছিলেন তিনি, দুজনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন রাতের আঁধারে। অন্ধকারে সেই পতিতাকে মেরি ভেবে ভুল করেছিলেন রোহান। তিনি ভাবলেন, আসলেই বুঝি রানী তার শয্যাসঙ্গিনী হতে এসেছেন, সত্যিই বুঝি রানীর সাথে তার সম্পর্ক জোড়া লেগে যাচ্ছে।
প্রেমাবেগে উদ্বেলিত রোহান রানীকে উপহার দিতে চাইলেন। রানীর জন্য উপহার বলে কথা, সেটা তো যেনতেন জিনিস হলে চলবে না। তাই তিনি কিনে আনলেন ডায়মন্ডের তৈরি নেকলেস, যেটির বর্তমান বাজারমূল্য দশ লক্ষ ইউএস ডলারের কম হবে না ২১ কোটি ৮ লাখ টাকার কাছাকাছি । মজার ব্যাপার হলো, রোহানের কাছ থেকে এই উপহার নিয়ে যায় নিজেকে রানীর ভৃত্য বলে পরিচয় দেয়া এক লোক। সেই লোকটি আর কেউ নন সয়ং জিয়ান্নির স্বামী।
জিয়ান্নি অবশ্য ধরা পড়েছিলেন। কিন্তু পুরুষের ছদ্মবেশ ধরে জেলখানা থেকে পালিয়েও যান তিনি। বাকি জীবনটা তিনি লন্ডনেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
আগের খবর সাদামাটা এক রাষ্ট্রপতির গল্প
পরবর্তী খবর সুন্দরী নারীর দেশ