নরমাংস ভক্ষণের ইতিহাস ও কারণ
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৯শে নভেম্বর ২০১৭, রবিবার
| বিকাল ০৫:২৮
আন্তর্জাতিক
ই-বার্তা।। ক্যানিবালিজম বা নরমাংস ভক্ষণ
মানে হোলো, নিজের স্বজাতিকে চিবিয়ে খাওয়া। মানুষের আচরণ যেখানে একজন মানুষ আরেকজনের মাংস ভক্ষণ করে অন্য প্রাণীর মাংসের মত। প্রাণীর আচরণ যেখানে সে তার নিজের প্রজাতির মাংস আহার করে এবং এটা তার সহযোগীও হতে পারে।
নরমাংস খাওয়ার ইতিহাস-
৭ম শতকে মুসলিম ও কোরাইশদের যুদ্ধের সময় ক্যানিবালিজমের সূচনা ঘটে। ৬২৫ সালে উহুদের যুদ্ধের সময় হামযা ইবনে আবদু মুত্তালিব নিহত হলে তার কলিজা ভক্ষণ করেন কোরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হার্বের স্ত্রী হাইন্ড বিনতে উটবাহ। ক্যানিবালিজিমের চর্চা হয়েছে লিবিয়া ও কঙ্গোতে বেশ কিছু যুদ্ধে। করোওয়াই হলো এমন একটি উপজাতি যারা এখনো বিশ্বাস করে যে নরমাংস ভক্ষণ সংস্কৃতিরই একটি অংশ। কিছু মিলেনেশিয়ান উপজাতিরা এখনো তাদের ধর্মচর্চায় ও যুদ্ধে এই চর্চা করে। জেরুজালেমেও এমন কিছু ঘটনা ঘটে। হাঙ্গেরীর মানুষরা মানুষের মাংস খায় যারা ১০ম শতাব্দীতে মাত্র মূর্তিপূজক থেকে খ্রিস্টানে পরিণত হয়। বিভিন্ন জংগলে জংলীরা ভ্রমণকারীদের ধরে এনে খেতো।
নরমাংস ভক্ষণের কারণ-
চরম পরিস্থিতিতে মানুষ এই পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে। যেমন দুর্ভিক্ষের সময়,
মানসিক সমস্যার কারণে বা সামাজিক আচরণের বিচ্যুতির কারণে।
প্রাথমিকভাবে নরমাংস ভোজের সামাজিক আচরণ ২ প্রকার। একটা হোলো একজনকে হত্যা করে তার মাংস খাওয়া জন্য ও আরেকটি হোলো স্বাভাবিকভাবে মৃত মানুষের মাংস খাওয়া।
১৯৪৩ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানীর প্রায় এক লক্ষ্য যুদ্ধবন্ধী সেনাকে রাশিয়ার সাইবেরিয়াতে পাঠানোর সময় তারা ক্যানিবালিজমের আশ্রয় নেয়। কারণ তাদের ক্রমাগত কম পরিমাণের খাবার সরবরাহ করা হতো ও তারা অসুখে আক্রান্ত হতো। মাত্র ৫০০০ জন বন্ধী স্ট্যালিনগ্রাডে পৌছতে সক্ষম হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউ গিনিতে জাপানী সেনাদের মাংস খাওয়ার কথা উল্লেখযোগ্য। তারা জীবন্ত মানুষের শরীর থেকে মাংস কেটে নিত ও ঐ ব্যাক্তিকে নালায় ফেলে মারত। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপানী সেনারা পাঁচজন আমেরিকান বিমান সেনাকে হত্যা করে খেয়ে ফেলে।
ড্রেঞ্জেল ভারগাস নামের ভেনেজুয়েলার একজন ব্যাক্তি ২ বছরে কমপক্ষে ১০ জন ব্যাক্তিকে খুন করে খেয়ে ফেলেন যাকে ১৯৯৯ সালে আটক করা হয়।
জেফরি ডাহমার নামের আমেরিকান একজন ব্যাক্তির বাসায় মানুষের হাড় ও মাংস পাওয়া যায়। তাকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৯১ সালে।
২০০১ সালের মার্চে জার্মানিতে আরমিন মাইভাস ইন্টারনেটে একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৮ থেকে ৩০ বছরের সুঠামদেহী জবাইযোগ্য ও আহার হতে চাওয়া মানুষের সন্ধান চাইছিলেন। বার্ন্ড জুর্গেন ব্রান্ডিস নামের একজন এতে সাড়া দেন ও খুন হয়ে যান। পরে আরমিন মাইভাসকে আটক করা হয়। রামেস্টেইন ব্যান্ডের মেইন টেইল ও ব্ল্যাড বাথ ব্যান্ডের ইটেন গান এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে রচিত।
পিটার ব্রায়ান নামের একজন ব্রিটিশকে ইস্ট লন্ডনে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয় যিনি তার বন্ধুকে খুন করেন ও খেয়ে ফেলেন।
১৮০৯ সালে নিউজিল্যান্ডের মাওরি উপজাতিরা নর্থল্যান্ডে দ্যা বয়েড নামের একটি জাহাজের প্রায় ৬৬ জন যাত্রী ও ক্রুকে খুন করে ও তাদের মাংস খায়।
আফ্রিকার একটি উপজাতী ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাঁদের মৃত স্বজনদের মাংস ভালবেসে ভক্ষন করতো। এখন এটা আইন করে বন্ধ করা হয়ছে।
১৯৭২ সালে উরুগুয়ের একটি বিমান দূঘর্টনায় বেঁচে যাওয়া কিছু মানুষ ১০ সপ্তাহ আন্দেজ পর্বতমালার একটি ৩.৬ কিমি উঁচু এলাকায় আটকে ছিলেন। ক্ষুধার তারনায় তারা তাঁদের মৃত সহযাত্রীদের মাংশ খেয়েছিলেন।
তাঁদের উদ্ধার করার পর উদ্ধারকৃত একজন জানিয়েছিলেন, তিনি যত ধরনের মাংশ খেয়েছেন, তার মধ্যে মানুষের মাংশ সবচেয়ে সুস্বাদু।
বিপদে পরলে মানুষের দ্বারা সব কিছুই সম্ভব হয়। নিজের শরীরের মাংস খাওয়ার কথাও শুনা যায় বিভিন্ন সময়।
আগের খবর ১৮৬০ সালের ছবির কন্যার হাতে মুঠোফোন
পরবর্তী খবর দ্বীপের নাম কুকুর-দ্বীপ