সত্যি নয়, এমন নয়টি ধারণা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৭ই নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার  | বিকাল ০৪:০১ আন্তর্জাতিক

ই-বার্তা। কেউ যদি কানের কাছে জোড়ে সাআআআআআআপ বলে চেঁচিয়ে উঠে, আপনি কি করবেন? নিশ্চয়ই শব্দটি শোনা মাত্র লাফ দিয়ে খাট, টেবিল বা অন্য কোনো উঁচু জায়গায় উঠে পরবেন। সাপ সম্পর্কে মানুষের ভয় এতই তীব্র যে, অনেকে সাপ শব্দটিকেই ভয় পায়। সাপ নিয়ে সবার ভয়ের কারণ হলো, সাপ দেখতে যথেষ্ট ভয়ঙ্কর, এবং এর কিছু কিছু প্রজাতি এতই বিষধর যে, এর কামড়ে মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী খুব দ্রুত মারা যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আলী রেজা খানের “বাংলাদেশের সাপ” বই অনুসারে এ দেশে সাপের প্রজাতি ৮১ বা তারও কিছু বেশি। আসলে বাংলাদেশে সাপের প্রজাতির সংখ্যা নিয়ে তথ্য বিভ্রাট আছে। তারমধ্যে ৫২ টি বিষহীন আর ২৭ টি বিষধর প্রজাতির সাপ বলে উল্লেখিত আছে বইটিতে।

সাপ সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা-
বাংলাদেশে সাপ সম্পর্কে ভুল ধারণার কোন কমতি নেই। এর পিছনে কিছু কারণও রয়েছে। সাপ সম্পর্কে এ দেশের সাধারণ মানুষের যা জ্ঞান, তা এসেছে সাপুড়েদের থেকে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্যগুলো হোলো,

১। জিহ্বা দিয়ে শোনা।
সাপ চলাফেরার প্রয়োজনে বার বার জিহ্বা বের করে তা আসলে শোনার জন্য নয়। সাপের জিহবার অগ্রভাগে “জেকবসন অর্গান” নামে একধরনের গ্রন্থি আছে যা দ্বারা সাপ বায়ুস্থ বিভিন্ন পদার্থের অস্তিত্ব অনুভব করে। এটিকে ঘ্রাণ নেয়াও বলা যেতে পারে।

২। সাপের দুধপান।
দুধরাজ নামক সাপ গরুর পা পেঁচিয়ে বাঁটে মুখ লাগিয়ে দুধপান করে। এটিও সাপ সম্পর্কে খুব আলোচিত একটি কুসংস্কার। এই ধারণার উৎপত্তি হয়েছে এভাবে, সাপুড়েরা অতীতে যে কাজটি করতো তা হলো, সাপকে দীর্ঘ সময় পানি থেকে দূরে রেখে তাদের তেষ্টা দারুণভাবে জাগাতো। তারপর জনতার সামনে তৃষ্ণার্ত সাপের সামনে দুধের বাটি রাখতো। বেচারা সাপ তেষ্টার চোটে সেই দুধই পান করতো। এভাবে সাপের দুধপানের বিষয়টি জনমুখে প্রচলিত হয়ে গেছে।

৩। প্রতিশোধ
সাপ একবার কারও দ্বারা আক্রান্ত হলে সে আক্রমণকারীকে চিনে রাখে এবং রাতে এসে কামড়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে


যায়। এটা সম্পূর্ণরূপে একটি কাল্পনিক ধারণামাত্র।

৪। সাপের মণি।
সাপের মাথায় মহামূল্যবান পাথর থাকে যাকে সাপের মণি বলা হয়- এই কথা আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি ও সিনেমায় দেখে আসছি। কিন্তু বাস্তবে দেখেছেন কি কেউ? এ জাতীয় কোন পাথুরে পদার্থ আসলে তৈরীই হয়না। সাপুড়েরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নানা চটকদার কথা বলে। আর মাঝে মাঝে তারা মণি হিসাবে যা দেখায় তা হলো মুক্তা বা অন্য কোন পাথর যা কোনভাবেই সাপের শরীর বা সাপের আশেপাশে পাওয়া যায়না।

৫। লেজের আঘাত থেকে পচন।
অনেকেরই ধারণা দাঁরাশ সাপ লেজ দিয়ে আঘাত করে এবং এই আঘাত যেখানে লাগে সেখানে পচন ধরে। কিন্তু এই ধারনা সত্য নয়। সাপের মাথা চেপে ধরলে সাপ লেজ দিয়ে হাত পেঁচিয়ে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দাঁড়াশ সাপের ক্ষেত্রে কোন বিশেষত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উপরন্তু এটি নির্বিষ ও মানুষের উপকারি প্রাণী। কারণ, এদের প্রধান খাদ্য ইঁদুর।

৬। পিচ্ছিল সাপ।
আমাদের দেশের সকলের ধারনা সাপ পিচ্ছিল। কিন্তু এটি সত্য নয়। সাপ পিচ্ছিল তো নয়ই বরং খসখসে। সাপের গা থেকে কোন প্রকার পিচ্ছিল পদার্থ নিঃসৃত হয়না।

৭। সাপের পা দেখে রাজা।
আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, সাপের পা দেখলে রাজা হওয়া যায়। কিন্তু সাপের কোন পাই নেই। তাই সাপের পা দেখে রাজা হবার কোন সম্ভাবনাও নেই।

৮। সাপের ওঝা।
সাপের ওঝারা যে চিকিৎসা করে তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। সাপের ওঝার চিকিৎসায় সেই রোগীই ভালো হয় যাকে এমন সাপে কামড় দিয়েছে যার বিষ নেই।

৯। সাপের কামড় মানেই মৃত্যু।
আমাদের দেশে প্রায় সব সাপকেই বিষধর মনে করা হয়। কিন্তু তা সত্য নয়। সব সাপ বিষধর নয়। সাপের কামড় খেলেই মৃত্যু অনিবার্য নয়। এমনকি বিষধর সাপের কামড় খেলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

সর্বশেষ সংবাদ

আন্তর্জাতিক এর আরও সংবাদ