জোড়া পাটির দাঁতের যত্ন
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২০শে নভেম্বর ২০১৭, সোমবার
| বিকাল ০৪:৩৮
মেডিকেল
আমাদের চোয়ালের দুপাশের দুটো হাড়কে ইংরেজিতে ম্যান্ডিবল বলে। ওপর ও নিচের এই ম্যান্ডিবলে দাঁত বসানো থাকে। হাড় দুটো দেখতে ইংরেজি T অক্ষরের মতো। কানের নিচ থেকে অপর কান পর্যন্ত এই হাড় দুটো চোয়ালকে ঘিরে রাখে।
জন্মের পর ম্যান্ডিবল থুতনির মধ্যখানে ফাঁকা থাকে। এক বছর বয়সে তা জোড়া লেগে যায়। ম্যান্ডিবলের ওপর দাঁতের জন্য ফাঁকা স্থান থাকে। এই ফাঁকা স্থানে দাঁতগুলো ওপর ও নিচের পাটিতে বসানো থাকে। হাড়ের দুপাশেই দাঁতকে শক্তভাবে আটকে রাখে দাঁতের মাঢ়ি বা গাম।
প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মানুষের মোট ৩২টি দাঁত থাকে। ওপরের পাটিতে ১৬টি এবং নিচের পাটিতে ১৬টি দাঁত থাকে। মানুষের দাঁত দুবার ওঠে। জন্মের পর থেকে যে দাঁতগুলো ওঠে সেগুলোকে বলে দুধদাঁত বা অস্থায়ী দাঁত। ইংরেজিতে বলা হয় টেমপোরারি বা ডেসিডুয়াস টিথ বা মিল্ক টিথ। পাঁচ বছরের শেষের দিকে দুধদাঁত পড়ে যায় ও নতুন দাঁত ওঠে। এই নতুন দাঁতগুলো বৃদ্ধ বয়সে পড়ে যায়, তখন আর দাঁত ওঠে না। এই দাঁতগুলোকে বলে স্থায়ী দাঁত। মানুষের দাঁতগুলো যথাক্রমে ইনসিসর, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার। মুখের সামনের খাড়া চারটি দাঁতকে বলে ইনসিসর বা কর্তনদাঁত। চারটি ইনসিসর খাবার কাটতে বা ছিঁড়তে সাহায্য করে। ইনসিসরের পরই দুপাশে রয়েছে দুটো ক্যানাইন। ক্যানাইন খাবার চিবোতে সাহায্য করে। ক্যানাইনের পর থাকে প্রিমোলার। এরা সংখ্যায় দুটি করে দুপাশে চারটি। প্রিমোলার দুটোকে ফার্স্ট ও সেকেন্ড প্রিমোলার বলে। একেবারে ভেতরে রয়েছে মোলার। মোলার সংখ্যায় তিনটি করে দুপাশে মোট ছয়টি। প্রিমোলার ও মোলার দাঁত খাবার চিবিয়ে মিহি করে। ফলে হজমে সাহায্য হয়। মোলার দাঁতগুলোকে যথাক্রমে ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড মোলার বলে। থার্ড মোলারকে বলে আক্কেল দাঁত বা উইজডোম টিথ। মোলার দাঁতগুলো দুপাশে মোট ছয়টি।
গর্ভাবস্থায় একটি শিশুর দাঁতের জন্য মাঢ়ি শক্ত হয়। তবে দাঁত বের হয় ছয় মাস বয়সে।
দাঁতের অন্যতম প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম, আয়রন ও আয়োডিন। দাঁতের যে অংশটি দেখা যায় না এবং হাড়ের মধ্যে বসানো থাকে তাকে বলে দাঁতের শেকড়। দাঁতের প্রধান অংশ ডেন্টিন। এই ডেন্টিনকে অ্যানামেল নামক আবরণ আবৃত করে রাখে। আর দাঁতের সবচেয়ে ওপরের অংশকে বলে ক্রাউন। এই ক্রাউনও অ্যানামেল দিয়ে ঢাকা থাকে। অ্যানামেল ধবধবে সাদা ক্যালসিয়াম ও আয়োডিনের এক আবরণ।
দাঁতের যত্নে আমাদের করণীয়-
১। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি ও এ সমৃদ্ধ খাবার খান। ভিটামিন ডি-এর অভাবে দাঁতের আবরণ অমসৃণ হয়ে যায় আর দাঁত অসমান্তরালভাবে বের হয়। ভিটামিন এ-এর অভাবে দাঁতের ডেন্টিনের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় না।
২। প্রচুর আয়োডিন, আয়রন, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান। রং যুক্ত টুথপেস্টের পরিবর্তে সাদা টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। সাদা টুথপেস্টে ক্যালসিয়াম, আয়োডিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
৩। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন। বিশেষত চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার গ্রহণের পরপরই দাঁত ব্রাশ করুন। মিষ্টি খাবার দাঁতের কোণে জমে ডেন্টাল ক্যারিজ নামের দাঁতের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি করে। তাই মিষ্টি খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ সম্ভব না হলেও কুলি করুন।
৪। অনেকেরই দাঁত অতিরিক্ত অসমান্তরাল থাকে। খাবার চিবোনোর সময় ওপরের পাটির দাঁতটি নিচের পাটির সঙ্গে সঠিকভাবে জোড়া লাগে না। ফলে খাবার ঠিকভাবে চিবোতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫। মাঝেমধ্যে খাওয়ার পর হালকা গরম পানিতে অল্প লবণ দিয়ে কুলি করুন। এতে মুখের জীবাণু মারা যাবে। মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে আরো ভালো।
৬। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা খাবার খাবেন না। অতিরিক্ত ঠান্ডা খাওয়ার পর অতিরিক্ত গরম খাবার খাবেন না।
৭। ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করুন। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগীদের দাঁতের মাঢ়ি দুর্বল হতে থাকে।
৮। দাঁতের ধরন বুঝে স্কেলিং করান। বাঁকা দাঁত হলে বেশি সচেতন হোন।
৯। অনেকের দাঁত জন্মগতভাবে অতিরিক্ত হলুদ থাকে, এমনটা যাঁদের তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ মতে হোয়াইটেনিং করতে পারেন। হোয়াইটেনিং এ হলুদ দাঁতকে সাদা করা সম্ভব।
১০। ধূমপান, মাদক বর্জন করুন। যেকোন মাদক শুধু দাঁত নয়, পুরো দেহের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)
আগের খবর শারীরিক ১০ অসুবিধায় করনীয়
পরবর্তী খবর আমাদের দুই নয়ন