আমাদের দুই নয়ন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২১শে নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার  | সকাল ১১:২৮ মেডিকেল

মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থা থেকেই প্রতিটি মানুষের চোখ তৈরি হয়। আমাদের কপালের নিচের দিকে নাকের দুই পাশে চোখের জন্য গর্ত রয়েছে। এ গর্তকে বলে অক্ষিকোটর। ইংরেজিতে বলে অরবিট। অরবিটের মধ্যে চোখ জোড়া মাংসপেশি দ্বারা আটকানো থাকে। আমরা চোখের তিন ভাগের এক ভাগ দেখতে পাই। দৃশ্যমান অংশের মধ্যে গোলাকার কালো অংশটিকে বলে আইরিশ। বংশগত কারণ ও অঞ্চলভেদে মানুষের আইরিশ কালো, খয়েরি ও নীল হয়। আইরিশের মধ্যে ছোট্ট কালো বৃত্ত রয়েছে। একে বলে পিউপিল বা চোখের মণি। কালো ও খয়েরি আইরিশসম্পন্ন ব্যক্তিদের চোখের মণি কালো হয়। আর নীল আইরিশের ক্ষেত্রে চোখের মণি নীল বা হালকা রুপালি হয়। চোখের সাদা অংশটির নাম স্কেরা। চোখের ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ জুড়ে স্কেরার বিস্তৃতি। স্কেরাকে হালকা স্বচ্ছ সাদা একটা পরদা আবৃত করে রাখে। আইরিশের ওপর হালকা স্বচ্ছ কাচের মতো পরদা থাকে। একে বলে কর্নিয়া। কর্নিয়া পাতলা মাংসল কাচের মতো উপাদান। চোখের সবচেয়ে পেছনের মাংসল অংশের নাম রেটিনা। রেটিনায় অসংখ্য শিরা উপশিরা ও নার্ভ (স্নায়ু) থাকে। কর্নিয়ার নিচের স্তরটার নাম আইরিশ আর আইরিশের নিচেই রয়েছে লেন্স। লেন্স চমশার কাচের মতো চোখকে দেখতে সাহায্য করে। আলোময় পরিবেশে কর্নিয়া লেন্সে আলো পাঠায়। লেন্সের আলো রেটিনায় প্রতিবিম্ব তৈরি করে। ফলে আমরা দেখতে পাই। বয়স হলে অধিকাংশ মানুষের লেন্সে ধূসর পরদা তৈরি হয়। এ ধূসর পরদাকে বলে চোখে ছানি পড়া বা ক্যাটার্যারক্ট। চোখে ছানি পড়লে কর্নিয়া লেন্সে আলো পাঠালেও তা কোনো কাজ করে না। কর্নিয়া নষ্ট হলে লেন্সে আলো পৌঁছায় না। তখন মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। তবে পরিবর্তনের (ট্রান্সপ্লান্ট) মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির কর্নিয়া নেওয়া যায়। মানুষ মরে যাওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করে কর্নিয়া সংগ্রহ করা যায়। মানুষের মস্তিষ্কের অপটিক নামক নার্ভের সঙ্গে চোখ সংযুক্ত থাকে। আলো কর্নিয়া, লেন্স পার হয়ে রেটিনায় পৌঁছায় প্রতিবিম্ব হয়ে। সেই প্রতিবিম্বের তথ্য অপটিক স্নায়ু মস্তিষ্কে পাঠায়। তখন মস্তিষ্ক নির্ধারণ করে সেই প্রতিবিম্বটা কিসের। এভাবে মস্তিষ্কের অপটিক স্নায়ু চোখের জন্য সংবেদনশীলতা গ্রহণ করে।

চোখের কাজ-
চোখের উপরিভাগ ও ভ্রুর নিচে অশ্রগ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থি থেকে কান্নার সময় পানি আসে। এ ছাড়া সব সময় অশ্রগ্রন্থি থেকে পানি নির্গত হয়ে চোখের ত্বক ভেজা রাখে এবং ধুলোবালি নির্গত হতে সাহায্য করে। চোখের ওপরের নরম মাংসল অংশকে বলে চক্ষুপল্লব। চক্ষুপল্লব ও চোখের পাপড়ি চোখকে বাইরের আঘাত ও রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষা করে।

চোখের যত্ন-
১। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে স্বাভাবিক পানিতে দুই চোখ ধুয়ে ফেলুন।
২। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ চোখে ব্যবহার করবেন না।
৩। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গরম পানিতে চোখ ধুবেন না।
৪। লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা বজায় রাখুন।
৫। প্রসাধনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড ব্যবহার করুন।
৬। শিশুদের চোখের কাজল ব্যবহার না করাই ভালো।
৭। প্রতিটি বয়সের মানুষকে সবুজ শাকসবজি, মৌসুমী ফল ও ছোট মাছ খাওয়া উচিত। ছোট মাছ রেটিনার পুষ্টি জোগায়।
৮। চশমা ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা প্রতিবছর চোখ চেকআপ করুন। সম্ভব হলে ৬ মাস পরপর চেকআপ করান।
৯। চোখের স্নায়ুগুলো রাত ১০টার পর থেকে দুর্বল হতে শুরু করে। তাই গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকবেন না।
১০। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে না থেকে বিরতি দিয়ে কাজ করুন।
১১। সকালে গোসল করুন। এতে সারা দিন চোখ ও মস্তিষ্কের স্নায়ু কর্মতৎপর থাকবে।
১২। প্রাকৃতিক সবুজ জিনিস যেমন সবুজ গাছ, পাতার দিকে তাকাবেন বেশি। প্রাকৃতিক সবুজ চোখের পুষ্টি যোগায় বেশি।


ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ