পানির খনির সন্ধান পাওয়া গেছে সাভারে
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২২শে নভেম্বর ২০১৭, বুধবার
| দুপুর ০১:৩৫
বিশেষ প্রতিবেদন
ই-বার্তা ।। ঢাকার সাভারের ভাকুর্তায় একটি পানির খনি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, ভূগর্ভের পানি উত্তোলনের জন্য সাভারে একটি পানির খনি পাওয়া গেছে। হিমালয় থেকে একটি চ্যানেল হয়ে ভাকুর্তায় এসে পানি জমা হচ্ছে। গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেই খনি থেকে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে। পানি উত্তোলন করলেও সেখানে শূন্যতা সৃষ্টি হবে না। হিমালয়ের পানি চ্যানেল দিয়ে এসে সেই শূন্যস্থান ভরাট করবে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে ওয়াসা ভবনে ‘ঢাকা ওয়াসার সার্বিক অগ্রগতি : আগামীর কর্ম পরিকল্পনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এতে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আক্তারুজ্জামান ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসা এমডি গত আট বছরে তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং আগামীতে তিনি আরো যা করতে চান সেগুলোও উল্লেখ করেন। জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তাকসিম এ খান বলেন, অনেক উন্নত শহরেও জলাবদ্ধতা হয়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বৃষ্টি হলে যান চলাচল বন্ধ করে টানেলে পানি জমা করা হয়। ঢাকা শহরে তা নেই। একটি শহরে ১২ শতাংশ এলাকা জলাশয় থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় আছে দুই শতাংশ জলাশয়। তারপরও অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আগামী বছর দু-তিন ঘণ্টার বেশি সময় নগরীতে পানি জমে থাকবে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সাত হাতে থাকবে না। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা বা কার হাতে যাবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত না হলেও দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খাল ভরাট ও দখল সম্পর্কে বলেন, খালগুলো দখলমুক্ত করে রাখার পর আবারো বেদখল হয়ে যায়। ওয়াসা বিষয়টি দেখভাল করছে। খালগুলোর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করছে ওয়াসা। এ ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও সহযোগিতা করছেন।
তাকসিম এ খান বলেন, ২০০৯ সালে যখন ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন ঢাকা ওয়াসার খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। পানির চরম সঙ্কট ছিল। ওই সময় সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া লাগত। ঢাকার জনপ্রতিনিধিদের পানি সঙ্কটের কারণে জনরোষেরও শিকার হতে দেখা গেছে। বিগত আট বছরে ঢাকা ওয়াসায় পানির উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়। এ কারণে পানির কোনো সঙ্কট নেই।
তবে সরবরাহ লাইনের কারণে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সাময়িক সমস্যা দেখা দেয়। সেসব সমস্যাও বিকল্পভাবে সমাধান করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ এশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক শহরের তুলনায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে এর স্বীকৃতিও মিলেছে।
তাকসিম বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ শিরোনামে একটি উদ্যোগ নেন। এ সময়ে ১৬০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও ৯০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়ায় ঢাকা ওয়াসা। ২০০৯ সালে দৈনিক ২১২ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা পানি উৎপাদন করত ১৮৮ কোটি লিটার। সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ। বিল আদায় হতো ৬০ শতাংশ। মাত্র আট বছরের ব্যবধানে এখন ২৩৫ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা পানি উৎপাদন করছে ২৪৫ কোটি লিটার। সিস্টেম লস কমে ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিল আদায় হচ্ছে ৯৯ শতাংশ।
দায়িত্ব নেয়ার সময় ৮৭ শতাংশ পানির উৎস ছিল ভূগর্ভ। এখন তা ৭৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। রাজস্ব আয় ৩০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৬৩ কোটি হয়েছে। বিলিং সিস্টেম শতভাগ ডিজিটাল করা হয়েছে। গ্রাহকেরা এখন ঘরে বসেই তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে, সমাধান নিতে পারছেন। শতভাগ ই-টেন্ডার করা হয়েছে।