সাদা মনের মানুষ সুব্রত ভট্টাচার্য- দ্বিতীয় পর্ব


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৬ই মে ২০১৭, মঙ্গলবার  | দুপুর ০১:৪৭ দেশ

৭৪ বছর বয়সের এই মানুষটি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় অবস্থিত পায়ড়াডাংগা গ্রামের পায়রা হয়ে এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে নিরলসভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন সৌহার্দ্য আর শান্তির বার্তা নিয়ে। তাঁর ছুটে বেড়ানোর একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বাই-সাইকেল। তাতে কি? শরীর-মন যাঁর দুটোই সুস্থ এবং সমান্তরাল তার পক্ষে সবই করা সম্ভব। আর সম্ভব হবেনা কেন? তিনি যে সাধক। সকল প্রকার অসুখ ও ঔষধ তাঁর কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। হতেই হবে। কারণ- পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেশন, আধ্যাত্মিক সাধনা তাঁকে এখনও তারুণ্যতা দান করেছে। এ তারুণ্য কবে ম্লাণ হবে কেউ তা জানেনা। তারুণ্য অমর। তারুণ্যের কোনো মৃত্যু নেই। তারুণ্য মানে সূর্য। সূর্য মানে আলো। আলো মানে আগুন। আর আগুন মানে হচ্ছে জ্ঞান। সেই জ্ঞানকে পুঁজি করে যে মানুষটি আজ সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সেই আগুনের পরশমণির ছোঁয়ায় যে মানুষটি আজ তারুণ্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন, দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে যে মানুষটি তারুণ্য সাধক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের গানকে কন্ঠ, হৃদয়, মেধায় ও মননে ধারণ করেছেন, তিনি সুব্রত ভট্টাচার্য। সুতরাং সুব্রত ভট্টাচার্যের তারুণ্য কখনোই স্তিমিত হবার নয়, হতে পারেনা।

১৯৬০ সালে নাগেশ্বরী ডি এম একাডেমি থেকে এস. এস. সি. , ১৯৬২ সালে কারমাইকেল কলেজ, রংপুর থেকে এইচ. এস. সি. পাশ করে ১৯৬৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় বন্ধু ‘কর্মযুদ্ধের’ সাথে পরিচয় ঘটে। বি. এস. সি পাশ করার আগেই তাঁর বাবা, সেই সময়ের প্রখ্যাত পন্ডিত স্বর্গীয় চপল কৃষ্ণ ভট্টাচার্যের নির্দেশে তাঁকে ভিতরবন্দ জে ডি একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে চাকুরি গ্রহণ করতে হয়। এটি তাঁর প্রথম চাকুরি। একদিকে চাকুরি অন্যদিকে পড়ালেখা দুটোই সামলানো অত্যন্ত কঠিন হলেও ১৯৬৫ সালে তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে বি. এস. সি. পাশ করেন। এরপর ভিতরবন্দ জে ডি একাডেমিতে মাত্র এক বছর চাকুরি করে ১৯৬৫ সালে তাঁর শিক্ষাগুরু, তৎকালীন প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ মরহুম আলহাজ সাইফুর রহমানের আদেশে তাঁকে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী দয়াময়ী একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ গ্রহণ করতে হয়। যদিও বি. এস. সি পাশ করার পর তাঁর ভীষণ ইচ্ছে ছিল শহরকেন্দ্রিক হবার। কিন্তু তাঁর বাবা ও শিক্ষাগুরুর আদেশ অমান্য করা তাঁর পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এজন্য সেসময়ে ঐ দুজন মানুষকে তিনি মনে মনে শত্রু ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষের দিকে এসে যখন সকল মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তাঁকে ঘিরে ফেলে, তখন তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, "আমার বাবা স্বর্গীয় চপল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য আর আমার শ্রদ্ধেয় স্যার মরহুম আলহাজ সাইফুর রহমানের নির্দেশ সেদিন যদি আমি অমান্য করতাম তাহলে আজ এত মানুষের ভালোবাসা আমি কখনোই পেতাম না"।

মোঃ রেজাউল করিম রেজা
(লেখাটি চলবে, চোখ রাখুন)

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ