সেকালের ঈদ, একালের ঈদ
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৬শে জুন ২০১৭, সোমবার
| সকাল ১১:৩৩
দেশ
ই-বার্তা ।। আফিফা মোহসিনা অরনি ।। আজ যখন আমরা হরেক রকম ঈদের শপিং করতে ব্যস্ত, তখন আমাদের মায়ের মুখে শোনা যায় তাদের সময় নাকি একটা ঈদের পোশাকই যথেষ্ট ছিল। ওই একটা পোশাক খুব সাবধানে মাথার কাছে বালিশের নিচে চাপা দিয়ে রাখতো তারা যাতে ঈদের আগে কেউ না দেখে ফেলে। ঈদের আগের রাত অর্থাৎ চাঁদ রাতে সবাই মিলে বাড়ির উঠান থেকে চাঁদ দেখা আর অনেক রাত পর্যন্ত আনন্দ করে ঈদের জন্য প্রস্তুতি নেয়াও ছিল ঈদেরই একটা অংশ। ঈদের দিন খুব ভোরে উঠে গোসল করে কার আগে কে ঈদের পোশাক পরবে এই ছিল তাদের ভাবনা। নিজেদের বাড়ি খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখতো তারা। সবাই মিলে সকালের খাবার বানানোর মধ্যেও নাকি খুব আনন্দ ছিল। বাড়ির ছেলেরা যখন ঈদের নামাযে যেত, তখন শুরু হতো বাড়ির মেয়েদের সাজগোছ। এরপর ঈদের সেমাই খাওয়া তো আছেই, সেই সাথে পাড়া বেড়ানো আর বড়দের সালাম করে সালামি নেয়া। মা গল্প করতো, তাদের নাকি ওই ১০/২০ টাকা সালামি পেয়েই খুশির সীমা থাকতো না। সেই টাকা দিয়ে কি কিনবে, কি খাবে, কি করবে এসব তালিকা করতো।
এ তো গেল সেকালের ঈদ। এবার বলি একালের ঈদের কথা। এখন ঈদ মানেই শপিং। কার কয়টা ঈদের জামা হোলো, কার জামা টা কত দামি এসব চিন্তায় চিন্তিত সবাই। এখন ঈদ মানেই ঢাকার ভয়াবহ জ্যাম ঠেলে গ্রামের বাড়ি যাওয়া। অনেকে এই জ্যামের ভয়ে আপনজনদের ছেড়ে শহরেই ঈদ পালন করে। কিন্তু ঈদের খুশি কি আর এভাবে হয়?
ঈদের আনন্দ এখনো আছে, কিন্তু পাল্টেছে তার ধরণ। চাঁদ রাতে এখনো আনন্দ হয়। কিন্তু সেটা হয় বার-বি-কিউ পার্টি বা বাড়ির বাইরে বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডা। এরপর বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে কি আর ভোরবেলা ওঠা যায়? এখন আর পাড়া বেড়িয়ে সালামি নেয়া হয়না। হয়না খুব ভোরে উঠে গোসল করে মা কে রান্নায় সাহায্য করা। এখনকার ঈদের আনন্দ যেন শুরুই হয় রাতের বেলা। রাত যত গভীর হয়, ছেলেমেয়েদের ঈদ ততই জমজমাট হয়। পরিবারের সাথে সেভাবে সময় কাটানো হয়না এই বিশেষ দিনটিতে। সময় দেয়া হয় বন্ধুদের। অনেকেই আবার বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যায় ঈদের ছুটিতে।
ঈদের আনন্দের বিবর্তিত রুপ ঈদকে যেন ফিকে করে দিয়েছে। তারপরেও ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ নানান রুপে বারবার ফিরে আসে আমাদের মাঝে। আমরাও সাদরে ঈদকে বরণ করে নেই আমাদের নিজস্ব আতিথেয়তায়।
আগের খবর আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে
পরবর্তী খবর সাদা মনের মানুষ সুব্রত ভট্টাচার্য- দশম পর্ব