সব সম্পর্কই বন্ধুত্ব
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৬ই আগস্ট ২০১৭, রবিবার
| দুপুর ০১:২৮
দেশ
আফিফা মোহসিনা অরণি।। বন্ধু শব্দটি উচ্চারণ করতেই আপনার চোখে নিশ্চয় এক বা একাধিক মুখের ছবি ভেসে উঠে। যা আপনার স্কুল, কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটির কিছু মানুষের। ছোটবেলায় স্কুলে যার পাশে বসতে না পারলে আপনার অভিমান হতো, যার সাথে বসে টিফিন ভাগাভাগি করে খেতেন, যে স্কুলে না আসলে আপনার সময়ই কাটতো না, তাঁর সাথে এখনো কি রোজ দেখা বা কথা হয়? ক্লাসের পর একসাথে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরা, কোথাও বসে সময় ভুলে রাজ্যের গল্প জুড়ে দেয়া সেই বন্ধুটির কথা মনে পড়ে? এক সময় যার সাথে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতেন আর শিক্ষকের হাতে ধরা খাওয়ার পর একসাথে শাস্তি পেতেন, সেই বন্ধুটি কোথায় আছে, কেমন আছে? ভাবতে গেলেই স্মৃতিকাতরতা আমাদের গ্রাস করে ফেলে। হতাশার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার আমরা সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেই। সময়ের সাথে সাথে ফিকে হয়ে যায় স্মৃতি, ফিকে হয়ে যায় সম্পর্ক, ফিকে হয়ে যায় বন্ধুত্ব। তবে এখন সোশাল মিডিয়ার জগতের কারণে বন্ধুত্ব আজীবন টিকিয়ে রাখার সুযোগ রয়েছে।
মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন। প্রাচীন প্রবাদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় বন্ধুত্বকে ভালোবাসারও উপরে স্থান দেয়া হয়েছে। প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্মার আত্মীয় হয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে। তবে মানুষ চেনা যত কঠিন, বন্ধু চেনা আরো কঠিন। জীবনে চলতে গেলে বন্ধুর সান্নিধ্য চাই সবারই। আবার চলতি পথে ব্যস্ততা কিংবা জীবন ধারার অদল-বদলের কারণে অনেক বন্ধুকে হয়তো নেহাত অনিচ্ছাতেই হারিয়ে ফেলি আমরা। একইভাবে পরিবেশ আর পারিপার্শ্বিকতার কারণে কখনো কখনো সন্ধান করতে হয় নতুন বন্ধুত্বেরও। এরপরেও সেই ছোটবেলার যে বন্ধুটি আজো হঠাৎ আপনার খোঁজ নেয়, বছরে একবার হলেও যে আপনার সাথে দেখা করে সে হয়তো জানে বন্ধুত্ব শব্দটি কতটা অর্থ বহন করে।
এ তো গেলো ছেলেবেলার বন্ধুর কথা। বন্ধু শুধু আপনার সাথে লেখাপড়া করবে বা খেলার সাথী হবে তা নয়। ছোটবেলায় যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, শিক্ষাজীবনে যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে, কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর তার অধিকাংশই হারিয়ে যায়। এ ধরনের খণ্ডকালীন বন্ধুত্বকেও কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কোন কারণ নেই। পৃথিবীর প্রতিটি সম্পর্কের সাথে বন্ধুত্ব লেগে আছে। আজ আপনি কোন বিপদে পড়লে সবার আগে যে মানুষটি আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে, আপনার আনন্দে যে হাসবে, আপনার কোনো ভূলে যে আপনাকে শাসন করবে, সেই আপনার বন্ধু। হতে পারে সে আপনার আত্মীয়, প্রতিবেশি, শিক্ষক বা নিতান্তই অপরিচিত একজন।
নিজের ভালোলাগা আর ভালোবাসাগুলোকে ভাগাভাগি করে নেয়াই হোক বন্ধুত্বের প্রথম দাবি। বন্ধুত্বের মাঝে যেন ভুল বোঝাবুঝি বা মনোমালিন্য সহজেই স্থান করে নিতে না পারে তা খেয়াল রাখতে হবে। বন্ধুত্বের যেমন সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা হয় না, তেমনি বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। বন্ধু হোলো জীবনে অক্সিজেনের মতো। যে কথা কাউকে বলা যায় না, সেই গোপন কথার ঝাঁপি নিশ্চিন্তে খুলে দেয়া যায় বন্ধুর সামনে। বন্ধু কখনো শিক্ষক, কখনো সকল দুষ্টুমীর একমাত্র সঙ্গী। বন্ধুত্বের আন্তরিকতা জীবনের চলার পথে অন্যতম সম্পদ।
আগের খবর জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ
পরবর্তী খবর আসুন ১ টাকা দিয়ে গর্ব করি