আসুন ১ টাকা দিয়ে গর্ব করি
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৯ই আগস্ট ২০১৭, বুধবার
| দুপুর ০২:২১
দেশ
আফিফা মোহসিনা অরণি।। চির সজীব একটি গান ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। যা শুনলে এখনো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় আমাদের বাঙালীদের। কি ছিল এই গানটিতে যা এখনো আমাদের রক্ত শিহরিত করে? কি ছিল এই গানটিতে যা ১৯৭১ সালের লাখো মানুষকে নিজের অধিকার, নিজের দেশ ছিনিয়ে নিতে সাহস দিয়েছিল? ছিল বলিষ্ঠ কন্ঠ। ছিলেন আমাদের কন্ঠযোধ্যাগণ। ছিলেন আব্দুল জব্বার। ১৯৭১ সালে দেশের দুঃসময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অসংখ্য গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়িয়েছেন এই মহান মানুষটি। বাংলাদেশের তিনজন গুনী শিল্পীর নাম উচ্চারণ করলে আব্দুল জব্বার নামটি আসবেই। সেই মানুষটি আজ আমাদের কাছে হাত পেতেছেন। এক টাকা করে চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে। যে দেশ স্বাধীন করতে নিজের কন্ঠকে একদিন হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছিলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে আজ সেই দেশের মানুষের কাছেই আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছেন আব্দুল জব্বার। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ ২-এ সুস্থ হওয়ার আশায় অপেক্ষা করছেন কালজয়ী এ শিল্পী। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আজ আমি লজ্জিত।
সাংবাদিকদের বলা তাঁর কথা, “আব্দুল জব্বার যদি জাতি গঠনের সংগ্রামে গান গেয়ে কোন ভুমিকা রেখেই থাকেন, তবে ষোল কোটি বাঙালি এক টাকা করে আমাকে সাহায্য দিক। তাতে আমার সুচিকিৎসা হবে। আমার দেহে স্থাপিত হবে দুটি কিডনী। তখন নিশ্চয়ই আমি বেঁচে যাবো”। তিনি লাইফ সাপোর্টে চলে গেলে অনেকে তাঁকে দেখতে আসবেন, মারা গেলে শহীদ মিনারে রাখা লাশে হাজার মানুষ ফুল দেবেন, এসব চান না। শুধু আরো কিছুদিন বাঁচতে একটু সাহাজ্য চেয়েছেন সবার কাছে। মমতাহীন এই পৃথিবীকে তিনি সুন্দর পৃথিবী বলেছেন, যেখানে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন মানুষটি। “পারলে কিছু টাকা দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করুন”- বাক্যটি আজ অনেক বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধছে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসংগীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ টাকা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন যে আব্দুল জব্বার, বাংলাদেশের সেই ঋণ শোধ করার সময় এসেছে। ঋণ সোধ করার এই সুযোগ হাতছাড়া করে আমরা যেন একটি লজ্জিত জাতি হিসেবে পরিচিত না হই। আমরা যেন গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পারি, ১৬কোটি মানুষ কি করতে পারে। আমরা যেন দেখিয়ে দিতে পারি, আমাদের সম্পদ আমরা আগলে রাখতে জানি। যারা আমাদের জীবনের শেষ শক্তিটুকু বাকি থাকা অবধি শুধু দিয়েই গেছেন, আমরাও তাঁদের অবহেলায় হারিয়ে যেতে দেই না।
বাংলাদেশের সম্পদ আব্দুল জব্বার নিজের গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’ গানের মতো জীবনের কাছে পরাজিত হয়ে যাবেন, তা স্বাধীন বাংলাদেশের কাম্য নয়।
আগের খবর সব সম্পর্কই বন্ধুত্ব
পরবর্তী খবর অকালপ্রয়াত তারেক মাসুদ ও তাঁর চিরঞ্জীবী স্বপ্ন