বন্যা পরবর্তী ত্রাণ চাইনা, চাই বন্যা মোকাবেলা করতে
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৩ই আগস্ট ২০১৭, রবিবার
| বিকাল ০৩:১৮
দেশ
আফিফা মোহসিনা অরণি।। বাংলাদেশে এবার দেখা দিয়েছে আকস্মিক প্রলয়ংকরী বন্যা। আকস্মিক পাহাড়ী ঢল এবং ইন্ডিয়ার ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় এদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ এক রাতেই পানিবন্দি হয়ে গেছে। গড়ে প্রতি ১০ বছর পরপর এমন প্রলয়ংকরী বন্যা হয়ে থাকে। দেশের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। তবে বন্যার প্রকোপ সবচাইতে বেশি দেখা দিয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে। বগুড়া, কুড়িগ্রাম, ভুরুঙ্গামারী, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্দা এবারে সব থেকে বেশি বিপদসীমায় রয়েছে। কুড়িগ্রামের ধরলা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুইদিন এই পানি আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি তাই হয়, তবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।
ভারত প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে ফারাক্কার পানি আটকে রাখে এবং বর্ষা মৌসুমে সকল গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দেয়। ফলে আমাদের দেশ বন্যা ও খরা দুইটি দূর্যোগের সম্মুখীন হয়। ভারতের এই সন্ত্রাসী আচরণ না ঠেকালে খুব বেশি দেরি নেই যেদিন গোটা বাংলাদেশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
বাংলাদেশে বন্যা এখন নিয়মিত বার্ষিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হচ্ছে। যার ফলে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ২৬,০০০ বর্গ কিমি অঞ্চল অর্থাৎ ১৮ শতাংশ ভূখন্ড বন্যা কবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সমগ্র দেশের ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখন্ড তলিয়ে যায়। বন্যাকালীন দুর্দশার চিত্র অবর্ণনীয়। প্রকৃতির এই খেয়ালীপনার কাছে মানুষ আজ অসহায়। বন্যার সর্বনাশী টানে ঘর-বাড়ি ভেসে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আর মানুষের একমাত্র আশ্রয় হয় ঘরের
চালে বা গাছের ডালে। বন্যা পরবর্তী দৃশ্যও করুণ। নানা প্রকার ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হয়। পেটের পীড়া, আমাশা, সর্দি, জ্বর, কাশি ইত্যাদি হয়।
এমন নয় যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় নেই। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধের ব্যাবস্থা নেয়া হয় দূর্যোগের পর এবং তাও দায়সারা ভাবে। ক্ষণস্থায়ী নয় বরং স্থায়ী বাবস্থা গ্রহণ করতে হবে প্রশাশনকে।
ঘন ঘন বন্যা হয়ে দেশের প্রায় সকল নিম্নাঞ্চল ভরাট হয়ে যাচ্ছে পলিমাটি দিয়ে। ফলে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে দিন দিন বন্যার ভয়াবহতা কমা তো দূরের কথা বরং বাড়বে। তাই নদী কেটে এর গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বহুতল আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। উজান এলাকায় জলাধার নির্মাণ করে বর্ষাকালে নদীর উদ্বৃত্ত পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নদীর উপচানো পানি প্রতিরোধে সারাদেশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিস্তৃত করে দিতে হবে। রাস্তাঘাটের মাঝে মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ কালভার্টসহ পানি সরবরাহ পথের সৃষ্টি করতে নদীর পাড়সহ সারাদেশে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।
বন্যা সমস্যার প্রতিকারেরই উপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। বন্যা পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলা করার আগে সরকারকে ভাবতে হবে কিভাবে বন্যা ঠেকানো যায়। বন্যার স্থায়ী সমাধানের ওপর নির্ভর করছে এ দেশের মানুষের জীবন ও জীবীকা। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের অসহনশীল মনোভাবকে রাজনৈতিবভাবে প্রতিরোধ করে মরণ ফাঁদ ফারাক্কাকে রুখতে হবে। সে জন্য চাই জাতীয় উদ্যোগ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা। সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, জনগণ কে পাশে পাবেই।
পরবর্তী খবর শ্রাবনষ্টমী কৃষ্ণপক্ষ রোহিনী ভাতিছে নভে