দেবী দূর্গার আগমন ও মহাষষ্ঠীর ইতিহাস
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
| দুপুর ০২:১২
দেশ
ই-বার্তা।। আজ বাসন্তী পূজোর মহাষষ্ঠী। এই তিথিতে দেবীকে আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে বাঙালী সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। ভোরের শিশির শিউলী সুবাসিত হয়ে আলোর দিশারী অসুর বিনাশিনী শ্রী শ্রী দুর্গা মা তার চার পুত্র-কন্যা নিয়ে হিমালয় থেকে পিতৃলোক মর্ত্যে আগমনের দিন আজ। ইতোমধ্যে মন্দির ও মন্ডপে বৈদিক মন্ত্রপাঠ আর মাঙ্গলিক নানা ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে রোববার মহাপঞ্চমী তিথির দিন শেষে দেবীর বোধন সম্পন্ন হয়েছে।
এবার দেবী দুর্গা দোলায় চড়ে মর্ত্যে আগমন করেছেন। যার ফল হিসেবে বলা হয়, মা এবার মড়ক নিয়ে এসেছেন, যার অর্থ মহামারী। আর দশমীর পরে দুর্গা দেবী গজে চড়ে গমন করবেন। যার ফল শষ্যপূর্ণা বসুন্ধরা। দূর্গাপূজা বা বাসন্তীপূজা সাধারণত চৈত্রের তিথিতে হয়ে থাকে। এই পূজা করেছিলেন লঙ্কার রাজা রাবন। রাবন দুর্গাকে পূজার মধ্যদিয়ে খুশি করে অমরত্ব লাভ করেছিলেন। তাই কোনোভাবেই রামচন্দ্র রাবনকে বধ করতে পারছিলেন না। দূর্গা হলেন শক্তির আধার। রাবনকে বধ করতেই মূলত শ্রী রামচন্দ্র শরতে অকালে আহ্বান করে দুর্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। তাই শরতের এই শারদীয় দুর্গা উৎসবকে অকাল বোধন বলা হয়।
দুর্গা মহা দেবী পরমা প্রকৃতি। তিনি ছিলেন শিবের স্ত্রী। মা দুর্গার আরেক নাম শিবদূতী। মহিষাসুর অন্য দেবতাদের স্বর্গ হতে তাড়িয়ে দিয়ে স্বর্গরাজ্য দখল করলে দেবতারা বিপন্ন হয়ে পড়েন। ব্রক্ষ্মার কাছে গিয়ে তাদের দুর্দশার কথা বলেন এবং তাদের এ মহা বিপদ থেকে যেভাবেই হোক রক্ষার পথ দেখাতে বলেন। ব্রক্ষ্মা তখন বলেন এই অসুরকে বধ করতে হলে প্রত্যেক
দেবতার নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে নিজ নিজ তেজের কাছে প্রার্থনা করতে হবে যেনো এক নারীমূর্তি আবির্ভুত হন। এই শুনে ব্রক্ষা, শিব ও অনান্য দেবতাদের তেজ থেকেই এক নারীমূর্তি আবির্ভুত হন। সকল দেবতা তাদের অস্ত্রসমূহ সে দেবীকে দান করলে সেই দেবী মহিষাসুরকে তিনবার বধ করেন। প্রথমবার অষ্টদশভুজা উগ্রচন্ডা রুপে, দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার মা দূর্গারুপে।
এরপর মহিষাসুর মা দূর্গার আরাধনা করলে দেবী মহিষাসুরের সামনে আসেন। মহিষাসুর বলেন “আপনার হাতে মৃত্যুর জন্য কোনো দুঃখ নেই, কিন্তু আপনার সাথে আমিও যাতে সকলের পুজিত হই, তারই ব্যবস্থা করুন”। মা দুর্গা তখন বলেন, “উগ্রচন্ডা, ভদ্রকালী ও দুর্গা এই তিন মূর্তিতে তুমি সব সময় আমার পদলগ্ন হয়ে দেবতা, মানুষ ও রাক্ষসদের পূজ্য হবে”।
বিভিন্ন সময় দূর্গা ঠাকুর তার সর্বশক্তি দিয়ে বিভিন্ন নামে মানবকল্যাণ সাধন করেছেন। মহিষাসুর নিধন করেছেন দুর্গা হয়ে, মধু কৈটভ বধ করেছেন বিষণ রূপে, শুম্ভ-নিশুম্ভ সংহার করেছেন কালীরূপ ধারণ করে। স্বর্গের রাজা ইন্দ্রাকে পরাজিত করে অসুররা স্বর্গলাভ করায় দুর্গার আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। কারণ দেব-দেবী, দেবতারা নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়েছিল অসুরদের হাতে। এই নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে তাঁরা পরিত্রাণের পথ খুঁজে পায় দেবী দুর্গার অসীম কৃপায়। ব্রহ্মরূপা সনাতনী ত্রৈকোল্য জননী দুর্গা এলেন, গিরিরাজ ও মা মেনকার ঘর আলোকিত করে হিমালয়ে উমা নাম ধারণ করে। তিনি পার্বতী নামেও খ্যাত ছিলেন। আবার কেউ কেউ তাকে গৌরীও বলতেন। ৮ বছর বয়সে উমা কঠোর তপস্যা করে শিবকে পতিরূপে গ্রহণ করেন। গৌরীদান কথাটি তখন থেকেই চালু রয়েছে।
আগের খবর একটা গোল্ডলিফ শেষ করার গল্প
পরবর্তী খবর শুদ্ধতার প্রতীক- কুমারী পূজা