শুদ্ধতার প্রতীক- কুমারী পূজা
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| দুপুর ১২:৪৮
দেশ
ই-বার্তা।। আজ মহা অষ্টমী। আজকের দিনে দুর্গোৎসবের একটি বড় অঙ্গ হলো কুমারী পূজা। ভারত ও বাংলাদেশের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে অষ্টমীর মহা তিথিতে এই কুমারী পূজা হয়ে থাকে। শাস্ত্রকাররা মূলত নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে এই পূজা করে থাকেন। সনাতন ধর্মে নারীকে সম্মানের শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হয়েছে। পুরাণ-এ বলা আছে, “নিজেদের পশুত্বকে সংযত রেখে নারীকে সম্মান জানাতে হবে”- এটাই কুমারী পূজার মূল লক্ষ্য। মনু সংহিতায় (হিন্দু আইনের বিখ্যাত বই) আছে, “যেখানে নারীরা পূজিত হন সেখানে দেবতার প্রসন্ন। যেখানে নারীরা সম্মান পান না, সেখানে সব কাজই নিষ্ফল”।
কুমারী পূজার ইতিহাস-
তখন শরৎকাল, দক্ষিণায়ন। দেবতাদের নিদ্রার সময়। তাই, ব্রহ্মা স্তব করে দেবীকে জাগরিত করলেন। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বেল গাছের বৃক্ষমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, এক দুর্গম স্থানে একটি বেলগাছের শাখায় সবুজ পাতার রাশির মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি বালিকা। তাঁর অঙ্গ সোনার মত আলো দিচ্ছে। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই জগজ্জননী দুর্গা। তিনি বোধন স্তবে তাঁকে জাগরিত করলেন। ব্রহ্মার স্তবে জাগরিতা দেবী বালিকা মূর্তি ত্যাগ করে চণ্ডিকা মূর্তি ধারণ করলেন। সকল নারীর মধ্যেই বিরাজিত রয়েছে দেবীশক্তি। তবে কুমারী রূপেই মা দুর্গা বিশেষভাবে দেখা দিয়েছিলেন। তাই কুমারী রূপে নারীকে দেবীজ্ঞানে সম্মান জানানোর একটি বাস্তব উদাহরণ হোলো এই কুমারী পূজা।
কুমারী পূজার নিয়ম-
হিন্দু ধর্মানুযায়ী কুমারীদের শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য কুমারী কন্যাকে নির্বাচন করা হয়। সাধারণত অষ্টমীতে
কুমারী পূজা করা হয়। সনাতন নিয়ম অনুসারে ১ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত, তবে তাদের ঋতুমতী হওয়া চলবে না। সর্বকামনা সিদ্ধির জন্য ব্রাহ্মণ কন্যা, যশোলাভের জন্য ক্ষত্রিয় কন্যা, ধনলাভের জন্য বৈশ্য কন্যা ও পুত্র লাভের জন্য শূদ্রকুল জাত কন্যা কুমারী পূজার জন্য যোগ্য। গুণ ও কর্ম অনুসারেই এই জাতি বা বর্ণ নির্ধারিত হয়। সেইজন্যই প্রচলিত শাস্ত্র অনুসারে, বিভিন্ন মন্দিরগুলোতে সর্ব মঙ্গলের জন্য ব্রাহ্মণ কন্যাকেই দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়।
শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় কোলাসুরকে বধ করার মধ্য দিয়ে থেকে। বর্ণিত রয়েছে, কোলাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।
বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয়, এমনকি বেশ্যাকুলজাত কুমারীও।
বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এই সকল কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।
এক বছরের কন্যা- সন্ধ্যা
দুই বছরের কন্যা- সরস্বতী
তিন বছরের কন্যা- ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যা- কালিকা
পাঁচ বছরের কন্যা- সুভগা
ছয় বছরের কন্যা- উমা
সাত বছরের কন্যা- মালিনী
আট বছরের কন্যা- কুষ্ঠিকা
নয় বছরের কন্যা- কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যা- অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যা- রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যা- ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যা- মহালপ্তী
চৌদ্দ বছরের কন্যা- পীঠনাযি়কা
পনেরো বছরের কন্যা- ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা- অন্নদা বা অম্বিকা