চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর কালাইরুটি


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩রা নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার  | দুপুর ১২:৪২ লাইফ

ই-বার্তা।। শাহিনুর রহমান হিমেল।। কালাই রুটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার৷ এটি পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবারও বটে। এক সময় কালাই এর সহজলভ্যতার কারণে এই অঞ্চলে এই রুটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এই এলাকার প্রত্যেক মেয়েই জানে জানে কীভাবে এই রুটি বানাতে হয়। তবে কালের বিবর্তনে কালাই চাষ কমে যাওয়ায় এর সহজলভ্যতা কমে গেছে এবং এর দামও বেড়ে গেছে। সাধারণত সকালের নাস্তা হিসেবে এটির প্রচলন ছিল যাকে স্থানীয় ভাষায় বলে লাহারী। আসলে লাহারী শব্দের অর্থ নাস্তা। কিন্তু এটি এখন কালাই রুটির সমার্থক হয়ে গেছে। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে এটি বিশেষ খাবারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

আগে পদ্মার বিশাল অববাহিকা দিয়ে কালাই ছিল প্রধান ফসল। কোন কোন ক্ষেত্রে ছিল একমাত্র ফসল। তাই এখানকার মানুষকে অনেকটা বাধ্য হয়েই কালাই রুটি খেতে হত। এখন কালাই এর আবাদ কমেছে। অন্যান্য ফসলের আবাদ বেড়েছে। মানুষের জীবিকার বৈচিত্র বেড়েছে বলে চাল-গম এর প্রচলন বেড়েছে। আর সে কারণেই এর সহজলভ্যতা কমে যাচ্ছে।


সাধারনত মাস-কালাই এর ডাল থেকে আটা বানানো হয়। এর সাথে পরিমান মত চালের আটা মিশানো হয়। হাতে টিপে টিপে এই রুটি বানাতে হয়। বেলন-পিড়িতে বানানো যায় না। তবে এটা বানাতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। বেশ মোটা হয় এই রুটি। তবে অনেকে পাতলা মচমচে কালাই রুটি খেতে ভালবাসেন। আর একটা রুটি খেলেই পেট ভরে যায়!

সাধারণত শীতের সকালে কালাই রুটির সাথে বেগুণ ভর্তা অথবা ধনে পাতার চাটনি দিয়েই এটি বেশি খাওয়া হয়। তবে শীতের সকালে এটি একটি বিশেষ আকর্ষণ। তবে অনেকে বট (গরুর ভুঁড়ি দিয়ে বানানো হয়) দিয়ে কালাই রুটি খেতে ভালবাসে। অনেকে গরু বা মুরগির মাংস দিয়েও খায়। ধনে পাতা শীতকাল ছাড়া তেমন সহজলভ্য না। তাই বছরের অন্যান্য সময় শুকনা মরিচ, পিয়াজ, তেল ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের ঝাল দিয়েও এই রুটি খেয়ে থাকেন।

জানি এতক্ষনে চাটনির কথা শুনে অনেকেরই জিভে জল চলে এসেছে।

আর এই বিশেষ রুটিটি তৈরি হয় কিন্তু এক বিশেষ ধরণের মাটির তৈরী খোলায়।

এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাটে বাজারে কিংবা রাস্তার ধারে কালাই রুটির দোকান দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে যে কেউ ৫-১০ টাকার বিনিময়ে উপভোগ করতে পারেন গরম গরম কালাই রুটি। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ না, রাজশাহী শহরেও গড়ে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কালা রুটির দোকান যেগুলো খুপরি বা ঝুপরি নামেই পরিচিত। তবে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ এই রুটি সম্পর্কে তেমন জানেন না। তাই প্রথম দর্শনে ও স্বাদে সারা বাংলাদেশের কাছে এই রুটি এক বিস্ময়কর খাবার!

চাঁপাইনবাবঞ্জ থেকে বিভিন্ন কাজে যাদের জেলার বাইরে বা দেশের বাইরে থাকতে হয় তারা প্রায় এই রুটি মিস করেন।

যাদের এই মুহূর্তে কালাই রুটি কিনে খাওয়ার সুযোগ নাই বা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অনেক দূরে আছেন, তাদের জন্য এই রুটি বানানোর রেসিপি দেয়া হলঃ

শহরের বা দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা কড়াই বা তাওয়া ব্যবহার করতে পারেন বিকল্প হিসেবে। তবে এটাতে বানানো রুটির আসল স্বাদ থাকে না। তারপরেও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি।

উপকরণঃ
মাসকলাই ডাল ভাঙা ২৫০ গ্রাম,
আতপ চালের গুঁড়ি ১০০ গ্রাম,
লবণ পরিমাণ মতো।

প্রণালীঃ
সব উপকরণ একসঙ্গে পরিমাণমতো পানি দিয়ে সঙ্গে রুটি বেলে মাটির খোলা অথবা মোটা তাওয়ায় ছেঁকে নিতে হবে।
(এ উপকরণটি দুটি কালাই রুটির মাপে) কালাই রুটি আম, বেগুন ভর্তা অথবা ধনিয়া পাতা বা তেঁতুলের চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন।

সর্বশেষ সংবাদ

লাইফ এর আরও সংবাদ