খালি হাতে যেতে আপত্তি নেই (?)
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৯ই নভেম্বর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| দুপুর ০২:০৫
প্রতিক্রিয়া
আফিফা মোহসিনা অরণি।। গত বছর নভেম্বরে ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টে গিয়েছিলাম পরিবারের সবাই মিলে। জীবনে প্রথমবার সারা রাত জেগে কোনো উৎসব উপভোগ করতে যাচ্ছি, তাই উত্তেজনাটাও ছিলো একটু বেশি। কিন্তু প্রবেশমুখেই হেনস্থার শিকার হতে হয় নিজের বোকামির কারণে। কারণ তাড়াহুড়া করতে গিয়ে আমি খেয়ালই করিনি, উৎসবে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা যাবেনা এমন জিনিসপত্রের একটি বিশাল তালিকা রয়েছে যার অনেকগুলোই আমার পার্স ব্যাগটিতে ছিলো। এসমস্ত বড় বড় অনুষ্ঠানে যে ক্যামেরা বা খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবেনা তা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড যখন একে একে আমার ব্যাগ থেকে আমার পছন্দের লিপস্টিক, কাজল, ফেইস পাউডার এমনকি দামী বিদেশী পারফিউমটিও নিয়ে নিলো, তখন কি আর মন ভালো রাখা যায়? তাদের কথা হোলো, এগুলো নিয়ে ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। হাতের পানির বোতলটিও নিয়ে ফেলে দিলো তারা। নিজের সাজগোজের প্রিয় জিনিসগুলো হারিয়ে যারপরনাই কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।
আমার ফেইস পাউডার বা পারফিউম কি এমন ক্ষতি করতো ফোক ফেস্টের? যদিও এটি অভিমানী মনের কথা। কারণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে থেকেই ফোক ফেস্টের ভিতরে কি নিয়ে প্রবেশ করা যাবে আর কি নেয়া যাবেনা তা জেনে নেয়া উচিৎ ছিলো আমার। আর এই বিষয়টি জানা উচিৎ সকলের। এতগুলো শিল্পীর নিরাপত্তা জোরদার তো হতেই হবে। কিন্তু বাধ সাধে তখনই যখন ফেস্টিভালের ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম, একদম পিছনের দর্শক সারিতে ধোঁয়া দিয়ে কুয়াশা হয়ে গেছে। বোঝার বাকি থাকেনা কি বিপূল পরিমানে ধূমপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন চলছিলো সেখানে।
“কিভাবে কৌশলে নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়েই প্রবেশ করতে পারছে ছেলেরা? তাদের না আটকিয়ে আটকানো হচ্ছে লিপস্টিক, কাজল, মেকাপ বক্স। ব্যপারটা হাস্যকর না?”- এমনটিই আক্ষেপ করে বলেছিলেন আমার পাশে বসা আরেক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তরুনী জান্নাত। জানতে পারলাম তারও প্রিয় কিছু জিনিস গচ্ছা গেছে প্রবেশমুখে।
শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, নাম জানাতে অনিচ্ছুক এক তরুন বলেন যে, তিনি নিজেই গত বছর ফোক ফেস্টিভালে দেখেছেন কিভাবে পিছনের সারিতে থাকা তরুণেরা দড়ি নিচে ফেলে মদের বোতল উঠিয়ে এনেছে ফোক ফেস্টের গ্যালারীতে।
আর ভদ্র সমাজ যখন খাবারের উদ্দেশ্যে ফুড কর্ণারে যায়, দাম দেখে খালি পেটেই ফিরে আসতে হয় তাদের। যেহেতু উৎসবে বাইরে থেকে আনা খাবার নিয়ে প্রবেশ নিষেধ, তাহলে ভিতরের খাবারের মূল্য এমন থাকা উচিৎ যা মধ্যবিত্ত মানুষ অন্তত হাতের নাগালে পায়। কারণ এই ফোক ফেস্টের বিপূল সংখ্যক দর্শক, এক কথায় ৫০ ভাগ দর্শকই থাকে অল্প বয়সী ছাত্র-ছাত্রী। আবার অনুষ্ঠান যখন শেষের দিকে, তখন একদম পানির দামে বিক্রি হয় ঐ একই খাবার। আর দর্শকদের লাইন লেগে যায় কম দামে সেসব কিনতে। হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কিতে অনেক ঝামেলারও সৃষ্টি হয় সেসময়।
এখন কথা হোলো এবারের ফোক ফেস্টেও কি আমরা সেই একই অবস্থা দেখবো? কারণ এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভাল ২০১৭ শুরু হতে যাচ্ছে আজ দিবাগত রাত থেকে, চলবে আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। এই অনুষ্ঠানে দর্শকদের সাথে করে নেয়া যাবেনা এমন জিনিসের বিশাল এক তালিকা দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যই। নিরাপত্তা অতিরিক্ত জোরদার করা হয়েছে এবং হচ্ছে এমনটিই দাবি কতৃপক্ষের। সেই নিরাপত্তার জন্য সকল প্রকার আইন মেনে চলা সকলেরই দায়িত্ব। কিন্তু কতৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে আগের বছরের মতো অভিযোগ যেন কেউই করতে না পারে আর। সুকৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে কেউ, এদিকে যেন সোচ্চার হন তারা। সুরের সাগরের মোহনীয় জগতের পবিত্রতা রক্ষা করতে সব রকম ব্যবস্থা নিবে তারা এটিই আমাদের একমাত্র কাম্য। এরকমটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের কোনোই আপত্তি নেই এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভালে (২০১৭) খালি হাতে প্রবেশ করে এক বুক প্রশান্তি নিয়ে বের হতে।
আগের খবর নৈতিক শিক্ষার আবশ্যকতা
পরবর্তী খবর মানুষ মানুষের জন্য