শুভ জন্মদিন ম্যাশ, শুভ জন্মদিন টাইগার অধিনায়কদের অধিনায়ক
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৫ই অক্টোবর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| দুপুর ০২:০১
দেশ
ই-বার্তা ।। আশেক আহমেদ ।। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মাশরাফি বিন মর্তুজা। একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। তারই হাত ধরে নতুনভাবে পথ চলতে শুরু করে বাংলাদেশের ক্রিকেট। হারিয়ে দেয় ভারত, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী সব দলকে। সেই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের জন্মদিন আজ।
নড়াইল জেলায় ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আজ ৩৪ বছর বয়স পূর্ণ হয়েছে তার। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে প্রায় ১৬ বছর ধরে যুক্ত আছেন তিনি।
তিনি অসামান্য এক প্রতিভাধর ক্রিকেটার। যেমনই প্রতিভা, তেমনই ব্যক্তিত্ব। সহজে মানুষকে আপন করে নেয়ার সবগুলো গুণ তার মধ্যে বিদ্যমান। নড়াইলের চিত্রা নদীতে সাঁতরে বেড়ানো সেই দুরন্ত কিশোর কৌশিক কখন যে হয়ে উঠলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকন, পোস্টারবয়- সেটা বোধকরি তার নিজেরও জানা নেই। সেই মাশরাফি বিন মর্তুজা কৌশিক পার করে ফেলেছেন ৩৪টি বসন্ত।
ছোট বেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত। সারাক্ষণ মেতে থাকতেন বন্ধুদের নিয়ে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন ক্রিকেট খেলতে। বাকি সময়টা চলতো ব্যাডমিন্টন আর চিত্রা নদীতে সাঁতার কেটে। এভাবেই একদিন সুযোগ পেয়ে গেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সেখান থেকেই তিনি চোখে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের। তার হাতে পড়েই ক্যারিয়ার বদলে যায় মাশরাফির। যে কারণে, তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচ না খেলেই টেস্টে অভিষিক্ত হন।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর শুরু হওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। বৃষ্টিবিঘ্নিত হওয়ার কারণে বোলিং করার সুযোগ পেলেন মাত্র এক ইনিংসে, ৩৬ ওভার। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সঙ্গে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দুই ফরম্যাটেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন মাশরাফির প্রথম শিকার। সেই যে শুরু পথচলা, এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৬টি বছর পার করে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের।
মাশরাফি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গতির বোলার এবং সমর্থকদের কাছে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামে পরিচিত।
মাশরাফি একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা পেটান। সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন যা কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের জন্য এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের
বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। চোটই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। ২০১৬ সালের রকেট বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় খেলায় ২ উইকেট সংগ্রহের মাধ্যমে মোট ২১৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারী হিসাবে তুলে ধরেন নিজেকে।
২০১৭ সালে ৬ই এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা সিরিজের শেষ টি২০ দিয়ে উনি আন্তর্জাতিক টি২০ খেলা থেকে অবসর নেন। মাঠে ম্যাশ নামে পরিচিত মাশরাফি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার যে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় অবসর নিলেন।
২০০৯ সালের শুরুতে মাশরাফি অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের সহকারী ছিলেন। পরবর্তীতে ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি মোহাম্মদ আশরাফুলের স্থলাভিষিক্ত হন এবং তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরসাথে নিজের প্রথম ম্যাচেই তিনি হাঁটুতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ঐ খেলায় বাংলাদেশ জয়লাভ করে কিন্তু মাশরাফি এই চোটের কারনে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠের বাইরে ছিলেন। উক্ত ম্যাচসহ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেন সাকিব আল হাসান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের সাথে হোম সিরিজে তিনি পুনরায় অধিনায়কত্ব পান। তবে এ বার তিনি শুধু একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য দায়িত্ব পান এবং এবারও তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। ২০১৫সালের বিশ্বকাপেও তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। মাত্র ৪৭ ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে টাইগারদের ২৭টি ওয়ানডে ম্যাচে জিতিয়েছেন তিনি। সংখ্যার দিক থেকে ম্যাশের চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল হাবিবুল বাশার। ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে ২৯ বার জেতান সাবেক এই অধিনায়ক। মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কা-ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোকে সিরিজ হারায় টাইগাররা। একটানা ছয়টি সিরিজ জেতে লাল-সবুজের দল। এ ছাড়া তাঁর অধীনেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে দেশের আর কোনো অধিনায়কেরই এত বেশি সফলতা নেই।
ক্যারিয়ারের ৩৬ টেস্ট খেলে ৭৮ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৭৯৭ রান করেছেন তিনি। ১৭৯টি ওয়ানডে ম্যাচে নিয়েছেন ২৩২ উইকেট। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের মাশরাফির চেয়ে বেশি উইকেট নেই আর কারোরই। ব্যাট হাতে করেছেন দেড় হাজারেরও বেশি রান।
এ জন্যই মাশরাফিকে টাইগার অধিনায়কদের অধিনায়ক বলা হয়। শুভ জন্মদিন অধিনায়ক শুভ জন্মদিন বাংলাদেশের প্রান।
আগের খবর শুদ্ধতার প্রতীক- কুমারী পূজা
পরবর্তী খবর বুদ্ধিমান প্রাণী- হাতি