ভালোবাসার অপর নাম- মাশরাফি


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৫ই অক্টোবর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | বিকাল ০৩:৫৪ দেশ

আফিফা মোহসিনা অরণি।। কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে মৃত্যুর আগে কি কি করে যেতে চাও? অনেক ইচ্ছার মধ্যে অন্যতম একটি ইচ্ছা আমি বলবো, “বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে একটি গোটা দিন কাটাতে চাই”। এই ইচ্ছা দিয়ে হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটার অর্থাৎ আমাদের সুপারহিরোদের প্রতি আমার ভালোলাগা কতটা। তারমধ্যে বলাই বাহুল্য, মাশরাফি-বিন মর্তূজা অন্যতম। হবেনাই বা কেন? নিজেকে খুব সাধারণ মানুষ দাবি করলেও তিনি যে কতটা অসাধারণ তা শুধু মাশরাফি ভক্তরাই জানেন।

৫ ডিসেম্বর, ২০১৬। এক কাছের মানুষের কাজের সুবাদে আমার সুজোগ আসলো মাসরাফির সাথে দেখা করার। তাও আবার ক্যাপ্টেনের মিরপুরের বাড়িতেই। কোনোভাবেই এই সুজোগ হাতছাড়া করা যায় না। তাইতো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্লাস বাদ দিয়েই ছুট দিলাম মিরপুরের দিকে।

মাশরাফির বাসায় ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখি তিনি ছাড়া বাকি সবাই বসে গল্প করছে। অদ্ভুত লাগলো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেনের সাদামাটা বাসা দেখে। সোফার একদিকে কাপড়ের স্তুপ, বসার জায়গা নেই। বসলাম একটু দূরে রাখা চেয়ারে। জানলাম, মাশরাফি এতক্ষণ এখানেই ছিলেন, মাত্রই ওয়াশরুমে গিয়েছেন। আমি অপেক্ষা করছি আর ভাবছি তাঁকে প্রথম কি বলবো। কেন জানি কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

দুই-চার মিনিট পার হতেই ঠিক আমার ডানদিক থেকে দরজা খুলে হনহন করে হেঁটে আসলেন মাশরাফি। হুমায়ুন আহমেদের ভাষা প্রাণ পেলো আমার অনুভূতিতে, যাকে তিনি শীতল স্রোত বলতেন। চোখ আটকে গেলো, আর কথাও। আমার সামনে একটু দূরে সোফায় বসলেন তিনি। আর ঘরের অগোছালো অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। মাত্র ১০ মিনিট হবে আমি সেখানে ছিলাম। পুরোটা সময় কোনো কথা বলতে পারিনি। মাশরাফি সহ বাকি সবাই কাজের কথা সেড়ে নিলেন।

উঠে আসার সময় কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম। হ্যান্ডশেক করতে করতেই জিজ্ঞেস করলাম, “যেকোনো খেলার লাস্ট ওভারে আমাদের দম আটকে যায়।


ক্যাপ্টেনের ভিতরে তখন কি চলে?”
ক্যাপ্টেন খুবই সাদামাটা উত্তর দিলেন একগাল হেসে, “ভয় আমারো লাগে, কিন্তু কি করবো বলেন? খেলতে তো হয়ই”।
কথা বাড়ানোর জন্যই হয়তো বললাম, “আপনার ছেলে মেয়ে কেমন আছে”?
এই কথায় আমাকে অবাক করে দিয়ে মাশরাফি বললেন, “আসেন আসেন ভিতরে আসেন। মেয়েকে দেখেন। ও এখন কুরআন শরীফ হাতে নিয়েছে। এখন অবশ্য ঘুমাচ্ছে”।
বুঝলাম, মেয়েকে নিয়ে কত গর্ব তাঁর। শত ব্যস্ততায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও ছেলে-মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে ভূলে যাননি তিনি। ভিতরে প্রথমে যেতে চাইনি, কিন্তু উনি আবার ডাকলেন। ভিতরে গিয়ে দেখি মাশরাফির ফুটফুটে পুত্র-কন্যা পাশাপাশি শুয়ে ঘুমাচ্ছে। মাশরাফি দুই বার মেয়েকে “মামনি, দেখ কে আসছে” বলে ডাকলেন। কিন্তু তারা গভীর ঘুমে ছিলো বলে টের পায়নি।

বাবা-মা ও কাছের মানুষদের কাছে কৌশিক। বিশ্বের সকল মানুষের কাছে মাশরাফি-বিন মর্তূজা। নড়াইল এক্সপ্রেস, বস, প্রিন্স অব হার্টস আরো কত নাম তাঁর। বাংলাদেশের মানুষ ভালোবেসে তাঁকে অনেক উপাধি দিয়েছে। শুনেছি, কিশোর বয়সে মাশরাফি বাড়ির কাছে চিত্রা নদীতে সাঁতরে বেড়াতেন। বাইক চালানো তাঁর আরেক প্রিয় কাজ। গ্রামে গেলেই তাঁকে বাইক নিয়ে স্থানীয় ব্রিজগুলিতে চক্কর মারতে দেখা যায় এখনো। নড়াইলের প্রাণ মাশরাফি। সেইসাথে প্রাণ বাংলাদেশেরও। বারবার জীবনের ছুড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জ কে টেক্কা মেরে মাশরাফি দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি কি পারেন। সেকথা আজ নতুন করে বলার কিছুই নেই। মাশরাফি ভক্তরা সবই জানেন।

সেদিনের মতো বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। কিন্তু তার রেশ কাটেনি আজো। কেন মাশরাফি দেশবাসীর কাছে এত ভালোবাসা পেয়েছে তা আর আমার কাছে কোন রহস্য নয়। কারণটি তার সাদামাটা জীবন যাপন এবং সাবলীল আন্তরিক ব্যবহার। আজ তাঁর জন্মদিনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, সহস্র বছর এভাবেই সবার ভালোবাসায় সিক্ত থাকুক আমাদের মাশরাফি। ভালো থাকুন মাশরাফি। ভালো থাকুন ভালোবাসা।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ