অসুস্থতা দূর করবে মিউজিক থেরাপি
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১২ই অক্টোবর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| বিকাল ০৩:১২
দেশ
আফিফা মোহসিনা অরণি।। মিউজিক থেরাপি কথাটির সাথে পরিচয় আছে? না থাকলে পরিচয় করিয়ে দেই- উচ্চ রক্তচাপ, ডিপ্রেশন, ঘুমে জড়তা বা স্মৃতি লোপের মতো অসুখ সারাতে গাদা গাদা অষুধের বদলে এখন শোনানো হচ্ছে গান বা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। ভাববেন না আবার কোনো হাতুড়ে ডাক্তার অথবা দার্শনিকের মতামত অনুযায়ী প্রয়োগ করা হচ্ছে এই থেরাপি। এটি উন্নত চিকিৎসাবিজ্ঞানেরই আবিষ্কার এবং নামিদামী চিকিৎসকেরা এখন এই থেরাপির পরামর্শ দেন সেইসাথে রোগীর উপর প্রয়োগ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মিউজিকের এই প্রয়োগকেই বলা হয় মিউজিক থেরাপি।
মিউজিক থেরাপি কিভাবে কাজ করে?
মিউজিক মস্তিষ্কের পেশীকে স্বাভাবিক রাখে। এমনকি আমাদের মস্তিস্কের ডোপামিন যা আমাদের আবেগ ও মেজাজ নিয়ন্ত্রন করে মিউজিকের মাধ্যমে তাকেও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে মিউজিক। মস্তিষ্কের ডোপামিনের প্রভাবে মানুষের আবেগের তারতম্য ঘটে। এই ডোপামিনকে নিয়ন্ত্রণ করে মিউজিক। ফলে, মনে অবসাদ, কিছুই ভালো লাগে না, সম্পর্কে তিক্ততা এমনকি চেপে ধরা রোগ সারাতেও ভূমিকা রাখতে পারে মিউজিক। স্ট্রোকের কারণে লোপ পাওয়া বাকশক্তি ধীরে ধীরে ফিরে পেতেও মিউজিক থেরাপির সফলতা রয়েছে।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের দাবি, মিউজিক হোলো ম্যাজিকাল। অর্থাৎ সঙ্গীতে জাদু আছে। শরীরের জন্মগত রোগ সারাতেও সঙ্গীত বা মিউজিক থেরাপির কোনও বিকল্প নেই। তাঁদের মতে সঙ্গীতে মস্তিষ্কের অকেজো কোষগুলি ক্ষণিকের জন্য হলেও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
শরীরকে চনমনে ও মনকে সুন্দর রাখতেও মিউজিকের জুড়ি নেই। নিয়মিত ২৫ মিনিট গান শুনলে ব্যাক পেইন অন্যত্র পাড়ি জমায়। পাওয়া যায় প্রশান্তির ঘুম। গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত গান শুনলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সুন্দর হয়। আরোও চাঞ্চল্যকর তথ্য হোলো, গান শোনার পর ছাত্রছাত্রীদের
মধ্যে পড়ার আগ্রহ, মনোযোগ এবং দক্ষতাও বাড়ে। মিউজিক শুনলে “ফিল গুড” হরমোন বাড়ে যা স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে। অটিজম আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসায় ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে মিউজিক থেরাপি।
কোনো কিছু নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করলে, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে, ঘুমের অভাবে, দুশ্চিন্তায়, মানসিক যন্ত্রণায় এমনকি শব্দ দূষণের মতো নানা কারণে মানুষের ভিতরে তৈরী হয় এক ধরনের মানসিক চাপ। আর এই কারণে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের মস্তিষ্ক। তাই স্ট্রেস মোকাবিলা করতে মনোবিদরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মিউজিক থেরাপির ওপর। গবেষকরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে আমাদের মস্তিষ্ক ছন্দে চলে। মিউজিকের ছন্দ-তাল, কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে ও ভাবনা-চিন্তা গুছিয়ে নিতে সাহায্য করে। কোনো মিউজিক্যাল বাদ্যযন্ত্র শোনা ও বাজানোও মস্তিষ্কে একই প্রভাব ফেলে।
শুধু বড়দের নয়, ছোটদের ক্ষেত্রেও এটি সাহায্য করে, বরং বড়দের তুলনায় আরো বেশি কাজ করে। মিউজিক থেরাপির গুরুত্ব এখন ক্রমশই বাড়ছে। যদি আপনি মনে করেন আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে অথবা কোনোকিছুতে মনঃসংযোগ করতে পারছে না তা হলে মিউজিক থেরাপি আপনাকে কার্যকর ফলাফল দিতে পারে। এমনকি একদম ছোট শিশু যে কথা বলতে শেখেনি, তাকেও শান্ত করতে এবং আরামে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পরামর্শ দেয়া হয় মিউজিক শোনানোর।
এবারে প্রশ্ন আসতে পারে কোন ধরণের মিউজিক কোন অসুখের উপর প্রয়োগ করবেন। উত্তর খুব সহজেই পাবেন ইউটিউব চ্যানেলে। সেখানে ধরণ অনুযায়ী মিউজিকের তালিকা দেয়া আছে যা সহজেই আপনাকে উপযোগী মিউজিকটি বাছাই করতে সাহায্য করবে। তবে অসুখের মাত্রা যদি বেশি হয়, তবে কোনো ধরণের বিরূপ প্রভাব এড়ানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।
আগের খবর ভালোবাসার অপর নাম- মাশরাফি
পরবর্তী খবর নাটক ও বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাস