মুসলমানদের কিবলা যেভাবে নির্ধারণ হয়
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৪শে অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার
| রাত ০৮:০৬
প্রতিক্রিয়া
ই-বার্তা।। মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় কাজগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় করা। আর নামাজ আদায়ের জন্য অন্যতম পূর্বশর্ত হলো কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো। ছোট থেকেই পশ্চিম দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে অভ্যস্ত হবার কারণে এবং কিবলা নিয়ে বিস্তারিত না জানার কারণে দেশের বাইরে গেলে বা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আবার অনেক সময় প্রশ্ন জাগে, মেরু অঞ্চলে কিংবা মহাকাশে গেলে কিবলা কোনদিকে হব। কেননা মেরুবিন্দুতে তো সবদিকই হয় উত্তর না হয় দক্ষিণ। চলুন জেনে নেয়া যাক কিবলা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
কিবলা হচ্ছে নামাজের জন্য মুসলমানদের যেদিকে মুখ করা দাঁড়াতে হয়, সেই দিকটি। অনেক ধর্মেই উপাসনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিক থাকে। সেরকমই মুসলমানদের জন্য কিবলা হচ্ছে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম, যা কাবা শরিফ নামে বেশি পরিচিত। তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রথমে কাবা শরিফ কিবলা ছিল না। বরং প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। মদীনায় হিজরতের ষোল মাস পর কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী কিবলা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের কিবলা অর্থাৎ কাবা শরীফ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়।
সুরা বাকারার ১৪৪ নং আয়াত থেকেই এটি পরিষ্কার যে, কিবলা হচ্ছে সেদিকে যেদিকে রয়েছে মসজিদে হারাম অর্থাৎ কাবা। এখানে কিন্তু কোনো দিক নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। কাবা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম দিকে থাকায় কিবলাকে কিবলা না বলে পশ্চিম দিক বলেই ডাকা হয়। কিন্তু কিবলা মানে পশ্চিম দিক না, এটি মনে রাখা জরুরি।
সাধারণ সমতল মানচিত্রে এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা থেকে কিবলা নির্ধারণ খুব একটা কঠিন না। এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের যে কোনো জায়গা থেকে কাবার দিকে একটি সরলরেখা টানুন। সরলরেখাটি যেদিকে সে স্থানের কিবলা মোটামুটি সেদিকেই হবে, কয়েক ডিগ্রী এদিক সেদিক হতে পারে পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির জন্য। কিন্তু উত্তর আমেরিকা থেকে বিশেষ করে কানাডা, আলাস্কা থেকে কিবলা নির্ধারণে আপনাকে গোলাকার পৃথিবীর আকৃতির কথা মাথায় আনতে হবে বেশ গুরুত্ব দিয়ে। সমতল ম্যাপে এসব এলাকা থেকে কিবলা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। কিন্তু পৃথিবী তো সমতল না। সুতরাং এসব জায়গা থেকে কিবলা নির্ধারণ করতে হবে কিছুটা ভিন্নভাবে।
উপরের মানচিত্রটি থেকে গোলাকার পৃথিবীকে সমতলে রাখলে কোন স্থান কোন দিকে ফিরে থাকতো তার ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণ সমতল মানচিত্র অনুযায়ী আলাস্কা কিংবা উত্তর আমেরিকার অন্যান্য জায়গা থেকে কিবলা দক্ষিণ-পূর্ব মনে হলেও বাস্তবে কিবলা উত্তর কিংবা উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত! সাধারণ সমতল মানচিত্রের ধারণা থেকে বের হতে না পারলে এটি পুরোপুরি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে আমেরিকা থেকে কিবলা উত্তর কিংবা উত্তর-পূর্ব দিকেই হয়ে থাকে।
এছাড়া ১৯০৯ সালে মিশরে কাজ করার সময় জেমস ক্রেইগ কিবলা নির্ধারণ সহজ করার জন্য একটি বিশেষ প্রজেকশন তৈরি করেন। এটিকে ‘ক্রেইগ রেট্রোজিমিউথাল প্রজেকশন’ বা ‘মক্কা প্রজেকশন’ বলা হয়। এ ম্যাপ দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো জায়গাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য জায়গাগুলো কোন দিকে অবস্থান করে সেটি দেখানো হয়। এর সাহায্যেও উত্তর আমেরিকার যেকোনো জায়গার কিবলা সহজে বের করা যায়।
সূর্যকে ব্যবহার করে খুব সহজে কিবলা বের করা যায়। প্রতি বছর ২৮ মে গ্রিনিচ সময় সকাল ৯ টা ১৮ মিনিট এবং ১৬ জুলাই গ্রিনিচ সময় সকাল ৯ টা ২৭ মিনিটে সূর্য ঠিক কাবার উপরে অবস্থান করে অর্থাৎ সূর্য আর কাবা একই সরলরেখায় অবস্থান করে। এ সময়ে একজন নিজ অবস্থান থেকে সূর্য যেদিকে দেখব সেদিকেই হবে তার কিবলা। একইভাবে ২৮ নভেম্বর গ্রিনিচ সময় রাত ৯ টা ৯ মিনিটে এবং ১৩ জানুয়ারি গ্রিনিচ সময় রাত ৯ টা ৯ মিনিটে সূর্য থাকে মক্কার প্রতিপাদ বিন্দুর ঠিক উপরে। এ সময় যে জায়গা থেকে সূর্য দেখা যায় তার ঠিক উল্টো দিকে কাবা অবস্থিত। এভাবেও কিবলা কোনদিকে তা নির্ধারণ করা যায়।
মেরুবিন্দুতে যখন থাকবেন তখন দিক নয় বরং আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে কাবার দূরত্ব। কারণ আপনি সব দিকে দিয়েই আপনি যেতে পারবেন কাবায়, কিন্তু মেরু বিন্দুতে দিকের সাথে সর্বনিম্ন দূরত্বের ব্যাপারটি হিসেবে আনতে হবে। যেদিকে মুখ করলে সর্বনিম্ন দূরত্ব হয় সেদিকটিই হবে মেরু বিন্দুর কিবলা। মেরুতে সাধারণ চৌম্বক কম্পাস কাজ করবে না। সেখানে আপনাকে জাইরোস্কোপ নামের চুম্বকবিহীন একধরণের কম্পাস এবং তারার অবস্থান হিসেব করে কিবলা ঠিক করতে হবে। একই নিয়ম দক্ষিণ মেরুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ভ্রমণ বিরতি নেয়া না যায়, তবে কাউকে জিজ্ঞাসা করে বা কম্পাস ব্যবহার করে কিবলা নির্ধারণ করে নামাজ শুরু করলেই হবে। যদি এটাও সম্ভব না হয়, তাহলে যেদিকে কিবলা হতে পারেমনে হয় সেদিকে ফিরেই নামাজ শুরু করা যাবে। মহাকাশচারী মহাকাশে থাকা অবস্থায় নামাজ আদায় করতে চান, তাহলে মহাকাশচারী তার ক্ষমতা অনুযায়ী কিবলা নির্ধারণ করবে। এই ব্যাপারে আরো একটা মত আছে, সেটা হল মহাকাশচারী পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকলেই হবে।